স্কুল শিক্ষিকা থেকে পুরোদমে উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস নন্দিনী

ছোট থেকেই জান্নাতুল ফেরদৌস নন্দিনী সাজগোজ খুব পছন্দ করতেন। শাড়ি, জুয়েলারি, ড্রেস ও সু-এর দিকে বাড়তি আকর্ষণ ছিল তার। সেই সাথে ট্র্যাডিশনাল, মেটাল ও মুক্তার জুয়েলারির প্রতিও। তাই ইচ্ছে ছিল কখনও সুযোগ পেলে এগুলো নিয়ে কাজ করবেন। সেই ইচ্ছা থেকেই ২০১৫ তে Beauty Mart BD নামে বিজনেস পেজ ওপেন করেন। নিজের একটু একটু করে সঞ্চয়ের ২০,০০০ টাকা দিয়ে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে চালু করেন স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার আইটেম নিয়ে প্রথম উদ্যোগ।

উদ্যোক্তা নন্দিনী জানান: যেহেতু আমি একজন চাকরিজীবী ফ্যামিলি থেকে এসেছি এবং আমার বাবা উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তাই বাবার সবসময়ই ইচ্ছে ছিল ছোট-বড় যাই হোক আমি যেন চাকরি করি। আমার অবশ্য কখনোই চাকরি করার কোন ইচ্ছা ছিল না।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করার পর তিনি একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করেন। ‘যেহেতু আমার প্রফেশনটা টিচিং, সেই সুবাদে আমাকে স্কুলে প্রচুর শাড়ি পরতে হতো এবং শাড়ি ও কামিজের সাথে সব সময় ছোট বড় মানানসই ও ম্যাচিং জুয়েলারিও পরতে হতো। আমার পরা জুয়েলারি নিয়ে আমার কলিগদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা পেতে শুরু করলাম। তারা জানতে শুরু করলো কোথা থেকে পারচেজ করি বা কোথা থেকে মেক করাই। আমার কলিগরা কয়েকজন আমার পরা জুয়েলারিগুলোই অর্ডার করতে শুরু করলো। সেই প্রশংসা থেকেই  খুবই স্বল্প পরিসরে আমি জুয়েলারি নিয়ে কাজ শুরু করলাম।’

নন্দিনী শুরুতে এখানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে কোভিড সিচুয়েশনের জন্য যখন পুরো পৃথিবী থমকে যায় এবং Work from Home শুরু হয়, তখন তার মাথায় আসে যে অবসর সময়টুকুতে তিনি জুয়েলারি নিয়েই পুরোপুরি কাজ করবেন, নিজস্ব কিছু ডিজাইনার দিয়ে জুয়েলারি মেক করাবেন ও দেশীয় গহনা নিয়ে কাজ করবেন।

‘সেই ভাবনা থেকে জুয়েলারি নিয়ে জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। সেই সাথে একটু একটু করে জুয়েলারি নিয়ে পড়াশোনাও করতে শুরু করলাম। উদ্যোক্তা হতে সময় ও শ্রম দুটোই দিতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত কষ্ট করতে হচ্ছে,কারণ কাউকে কপি না করে, কারও ডিজাইন ফলো না করে, নিজের এক্সট্রা ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’

তার দুই ধরনের জুয়েলারি আছে। নিজের ডিজাইন করা জুয়েলারি তার সিগনেচার কালেকশন হিসেবে পরিচিত। আর রয়েছে কাস্টমাইজড ডিজাইনার জুয়েলারি। এই গহনাগুলোর বেইজ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কাজ দেশীয় কারিগর দিয়ে হাতে তৈরি করা হয়। তার মূলত পাঁচজন কারিগর আছেন যারা খুবই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। একেকজন একেক রকম ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন। মাসে তিনি কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ গহনা বানানোর চেষ্টা করেন।

‘আমার গহনার মূল বিশেষত্ব হচ্ছে, আমি কখনও কোন ওয়ানটাইম কালার ইউজ করি না, আমার গহনার মিনিমাম কালার গ্যারান্টি পাঁচ বছর।’

উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস নন্দিনী নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন: উদ্যোক্তা হতে হলে সকল বাধা পার করে লক্ষ্যটা স্থির রেখে অনেক বেশি ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। অনেকেই অনেক কিছু বলে, বলবেই; অনেকভাবে থামানোর চেষ্টা করবে, সেগুলোকে একপাশে রেখে মনোবল নিয়ে নিজের কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবেই লক্ষ্যে পৌছানো যাবে।

আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here