ভ্রাম্যমাণ টি স্টল নিয়ে রনির ভিন্ন উদ্যোগ

0
উদ্যোক্তা- রনি

রাজশাহীর জিরোপয়েন্ট অথবা দহপাড়াগ্রামের তেঁতুলতলার কেউ ফোন দিয়ে বললো, “রনি ভাই চা নিয়ে আসেন”; বলতে দেরি হলেও পৌঁছাতে খুব একটা সময় নেন না ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা মোঃ রনি। তার চায়ের জাদু মন কেড়েছে অসংখ্য চা প্রেমির। সাধারণ চা বিক্রেতা থেকে ভ্রাম্যমাণ চায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন রনি।

শৈশব না পেরোতেই মা-কে হারান, এরপর বাবা সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে নতুন সংসার গড়েন। ঠাঁই হয় নানির ঘরে। বোনকে নিয়ে নানির সংসারে বেড়ে উঠেছেন তিনি। নানা অনেক আগেই পৃথিবী ত্যাগ করেন, তাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছোট্ট রনিকে হাতে তুলে নিতে হয়েছিল বাদামের ঝুড়ি। দ্বিতীয় শ্রেণিতেই চোকাতে হয়েছিল পড়াশোনার পাঠ। এভাবে শৈশব কাটে রনির। কিছু বছর পর ভ্যান চালাতে শুরু করেন। অনেকটা সময় কাটে এই পেশায়। পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মোঃ রনি, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলাতে আর্থিক অনটনে পড়ে যান। ছয় বছর আগে বাড়ির পাশে তেঁতুলতলা বাজারে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দেন রনি। সেখানকার রোজগারে দিন চলে যেত তাদের। করোনার ভয়াল ছোবলে বন্ধ হয়ে যায় রনির চায়ের দোকান।

কিন্তু কাজ না করলে সংসার কি করে চলবে! সন্তানের লেখাপড়াই বা কিভাবে হবে! এসব চিন্তা থেকে রনির কাজ বন্ধ হলেও ভয় পেয়ে একেবারে পরাজিত হননি। সে-সময় হেঁটে-হেঁটে চা বিক্রি শুরু করেন তিনি। তবে পায়ে হেঁটে খুব বেশি বিক্রি হচ্ছিলো না। তাই নিজের ভাঙাচোরা সাইকেলটি মেরামত করলেন চা বিক্রির জন্য। দহগ্রাম এলাকায় প্রথমবারের মতো মোঃ রনির হাত ধরে সৃষ্টি হলো ভ্রাম্যমাণ চা নিয়ে নতুন উদ্যোগ। সাইকেলে করে ফ্লাস্ক নিয়ে বের হন। সাইকেলের সামনে ঝুলিয়ে দেন ফোন নাম্বারসহ একটি বোর্ড। এতে অল্প সময়ে চারদিক থেকে ব্যাপক সাড়া পান মোঃ রনি। তার হাতের চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে পাড়া-মহল্লাসহ শহরের অলি-গলিতে। তবে এভাবে সাইকেলে করে বেশি দূর যেতে পারতেন না তিনি। গেলেও সময় লেগে যেত অনেকটা সময়। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন একটি মোটরসাইকেল কিনবেন। গত বছর ডিসেম্বরে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এবং নিজের সামান্য টাকা যুক্ত করে পুরোনো একটা মোটরসাইকেল ক্রয় করেন রনি।

মোটরসাইকেলের দুইপাশে লোহা দিয়ে দুইটি বক্স তৈরি করে নেন। সেখানে চা ভর্তি চারটি বড় ফ্লাস্ক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। মোটরসাইকেলের পেছনে ঝুড়ি সংযুক্ত করে সেখানে রাখছেন ওয়ানটাইম কাপ, পানি, ন্যাকড়াসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এভাবে প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছেন এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রামে, শহরের অলি-গলিতে। মোটরসাইকেলের পেছনে নআম্বর দেওয়া থাকায় খুব একটা অসুবিধা হয় না তার সুপেয় চা অর্ডার করতে।

রনি বলেন, ‘দুধ চা এবং মশলা চা বিক্রি করি আমি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার সহধর্মিনী রানু বেগম বড় পাতিলে চুলায় চাপিয়ে দেন চায়ের পানি। সেগুলো ফুটলে আমি এসে দুধ, চিনি মশলা ঢেলে তৈরি করি দুধ চা এবং মশলা চা। চুলায় চা থাকা অবস্থায়ই একের পর এক ফোন আসতে শুরু হয়, রনি মামা চা নিয়ে আসেন, রনি ভাই এখানে চা দিয়ে যান। সকলের ডাকে সাড়া দিতে আমি সকাল-সকাল বের হয়ে পড়ি মোটরসাইকেল নিয়ে। এভাবেই আপনাদের ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা রনি মামা হয়ে উঠি’।

ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা মোঃ রনির এক ক্রেতা উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘রনি মামার চায়ে যাদু আছে। তাই সেই স্বাদ গ্রহণের জন্য এখন নিয়মিত মামার হাতের চা খাওয়া হয়’।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে রনি উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘আমাদের সকলের চাওয়া করোনা মহামারী যেন পৃথিবী থেকে দ্রুত বিদায় নেয়। আমি চাই ভ্রাম্যমাণ চায়ের এ উদ্যোগ যেন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আমার এ উদ্যোগকে বৃহৎ পরিসরে রূপ দিতে কিছু টাকা জমিয়ে আরো মোটরসাইকেল কিনতে চাই যাতে অন্য লোককেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং আমার উদ্যোগ বড় হয়’।

তরুণদের উদ্দেশ্যে মোঃ রনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যারা কাজ হারিয়েছেন বা বেকার বসে আছেন তারা উদ্যোক্তা হন। তাহলে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশ থেকেও দারিদ্র্যতা দ্রুত দূর হবে’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here