দেশীয় দুই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে ৬৫০ কোটির বেশি বিদেশি বিনিয়োগ

0

বাংলাদেশের দু’টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ৬৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে।

৬৪০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে শপআপ। উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের অক্টোবরেও তারা পেয়েছিল ১৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

আর্থিক সেবা মাধ্যম পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলসহ তিনজনের প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড ভালার ভেঞ্চারসের নেতৃত্বে এই বিনিয়োগে আরও রয়েছে প্রসুস ভেঞ্চারস, ফ্লারিশ ভেঞ্চারস, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া এবং ভিওন ভেঞ্চার্স।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গণপরিবহনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেটিং সেবা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘যাত্রী’ ১২ লাখ মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। যাত্রীতে এই বিনিয়োগ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান রিফ্লেক্ট, সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিটিএফভি ভিশন ফান্ড ও এসবিকে টেক ভেঞ্চার।

সম্প্রতি শপআপ ৬৪০ কোটি টাকার যে বিনিয়োগ পেয়েছে তা বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে আমাদের ব্যবসা খাতে সবচেয়ে বড় সিরিজ বা বিনিয়োগ জানিয়ে কোফাউন্ডার ও চীফ প্রোডাক্ট অফিসার আতাউর রহিম চৌধুরী বললেন, এই বিনিয়োগের পেছনে শপআপের সব কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। এই মহামারি এবং বিভিন্ন সময়ের লকডাউনেও আমাদের সম্মুখসারির কর্মীদের হার না মানা পরিশ্রমের ফসল এই বিনিয়োগ।

শপআপের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আফিফ জামান, চিফ প্রোডাক্ট অফিসার (সিপিও) আতাউর রহিম চৌধুরী, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) শাহিন সিয়াম।

মোকাম, রেডএক্স ও বাকি নামে তিনটি সেবা রয়েছে শপআপের। বিটুবি ব্যবসার অ্যাপ মোকামের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাড়ার মুদি দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয় শপআপ। এ জন্য বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পরিবেশক ও পাইকারদের সঙ্গে চুক্তি করে শপআপ।

তাছাড়া রেডএক্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পণ্য কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। গত বছর যাত্রা শুরু করা রেডএক্স বর্তমানে ৪৯৩ উপজেলায় সেবা দিচ্ছে। আর ‘বাকি’ সেবার মাধ্যমে বাকিতে পণ্য কিনতে পারেন ছোট ব্যবসায়ীরা।

নতুন বিনিয়োগে নিজেদের পরিষেবাগুলি প্রসারিত করা হবে জানিয়ে যাত্রী স্টার্টআপের সহ প্রতিষ্ঠাতা জিয়া উদ্দিন জানালেন, আমরা বিআরটিসি, প্রাইভেট বাস মালিক এবং আমাদের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে যে অবিসংবাদিত সমর্থন এবং বিশ্বাস পেয়েছি তার জন্য সত্যিই কৃতজ্ঞ।

তিনি বললেন, বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে ডিজিটাইজেশনের প্রমাণ যাত্রী। আমরা নতুন বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করি শিগগিরই সারা বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে।

যাত্রীর তিন সহপ্রতিষ্ঠাতা হলেন আজিজ আরমান, খন্দকার তাসওয়ার জাহিন ও জিয়া উদ্দিন। তাদের মধ্যে আজিজ আরমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গণপরিবহনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেটিং সেবায় সফলতা আসায় বাস কাউন্টার ব্যবস্থাপনার সেবা অ্যাপে সংযুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রামের অনেক ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসের টিকিট ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয় যাত্রী।

প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যে এক হাজার ইন্টার সিটি বা আন্তঃজেলা ও সিটি বাসের সঙ্গে কাজ করছে যাত্রী। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ৩৫ লাখ বাসের টিকিট বিক্রি করেছে।

সরকারের সংস্থা বিটিআরসির বাসের টিকিট ব্যবস্থাপনাতেও গত বছর যুক্ত হয়েছে যাত্রী। এ ছাড়া চলতি বছর রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালু করেছে স্টার্টআপটি। এর মাধ্যমে মাইক্রোবাস ভাড়া করা যায়। কোনো যাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে রিকোয়েস্ট পাঠালে আগ্রহী চালকেরা বিভিন্ন ভাড়া অফার করেন। তখন সে যাত্রী পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি বেছে নিতে পারেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বড় রকম প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে এই স্টার্টআপ ব্যবসা। লাইটক্যাসল পার্টনার্সের গবেষণা বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশি স্টার্টআপে বিনিয়োগ হয়েছে ১১১.৬ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ ১০৯.৪ মিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৯৮ শতাংশই বিনিয়োগ করেছেন। আর বাকি ২.২ মিলিয়ন ডলার এসেছে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। ২০২০ সালে স্টার্টআপে বিনিয়োগ হয় ৩৯.১ মিলিয়ন ডলার।

উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here