গোলাপ কাঁটায় ভাগ্য বদল

0

কুয়াশা ঢাকা স্নিগ্ধ সকালে সূর্য মামার দেখা না গেলেও ফুল এবং ফুলের বাগান পরিচ ব্যস্ত হতে দেখা যায় গোলাপের ভূস্বর্গ খ্যাত সাভারের বিরুলিয়ার কৃষি উদ্যোক্তাদের।

সাভার উপজেলার শ্যামপুর, কমলাপুর,সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নসহ ২৯ টি গ্রামে অসংখ্য বাগানে এখন গোলাপের সমারোহ।

প্রায় ৩০ – ৩৫ বছর আগে সীমিত আকারে নিজস্ব বসত ভিটায় গোলাপের চাষ শুরু হয় সাভারে। কেননা তখন সেই জমিতে অন্যান্য ফসলাদির ভালো ফলন পাওয়া যেত না। গোলাপের চাষ ভালো হওয়ায় এই এলাকায় এখন প্রধান অর্থকরি ফসল হচ্ছে ফুল যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোলাপ।

কৃষকের আবাদি ক্ষেত থেকে বাড়ির আঙ্গিনা সবখানেই গোলাপের চাষ। ১ বিঘা জমিতে প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে ২ হাজার ফুল পার স্টিক ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয় এতে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। এভাবেই এই এলাকার কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন হয়েছে ফুল চাষের মাধ্যমে।

গেল ১৬ ই ডিসেম্বর ফুলের ব্যাপক চাহিদা এবং বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের কৃষি উদ্যোক্তারা। দিন রাত চলছে ফুল বাগান ও ফুল পরিচর্যার কাজ। একুশে ফেব্রুয়ারি, ১লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোর জন্য ফুল চাষ এবং ফুল বাগান নিয়ে ব্যস্ত এই অঞ্চলের ১২শ ফুলচাষী পরিবার। বাজারে এবার ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় লাভের পাশাপাশি করোনার ক্ষতিও কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা ফুল চাষীদের।

কৃষি উদ্যোক্তা রাকিব বলেন, আমার বাবা প্রায় ১৫ বছর গোলাপ ফুল চাষের সাথে জড়িত এখন আমি ৪ বছর ধরে এই কাজ দেখাশুনা করছি। ৪ বিঘা জমিতে আমাদের গোলাপ বাগান রয়েছে। শীতের মৌসুমে গোলাপের চাহিদা একটু বেশি থাকে পার স্টিক আমরা ৮ থেকে ১০ টাকায় সেল করি। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় হয়। আশা করি বিগত দিনগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো৷

সরেজমিনে দেখা গেল কৃষি উদ্যোক্তা আমিনুল অতি মনোযোগ দিয়ে তার বাগান থেকে ২০০ গোলাপ কাটছেন। তিনি জানালেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের চাহিদা অনেক থাকে।

আমিনুল বলেন, আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে গোলাপ নিয়ে কাজ করছি। গোলাপ চাষে খরচ কম এবং লাভজনক। আমার আর্থিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার ফুল বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় হয় হচ্ছে আমার।

কৃষিভিত্তিক পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে সার্বিকভাবে ফুলের বাজার মূল্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। একসময় শুধু যশোরের ঝিকরগাছায় ফুলের চাষ হতো। জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টি জেলায় কমবেশি ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে।

সাভার উপজেলা থেকে বিভিন্ন রঙের গোলাপ গুলো সরাসরি যাচ্ছে শাহবাগ এবং আগারগাঁওয়ের ফুল বাজারে আর সেখান থেকে ফুল গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।

বিভিন্ন দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন গোলাপ বাগান দেখতে। নিজের পছন্দ মত গোলাপ বেছে নেবার সুযোগ রয়েছে সেখানে। বিকেলের পর এক প্রকার গ্রামীণ মেলা জমে উঠে এই ফুল বাগানকে কেন্দ্র করে।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here