উদ্যোক্তা দিশা দেখাচ্ছেন নতুন দিশা

0
উদ্যোক্তা নিশাত জেরিন দিশা

নিশাত জেরিন দিশার বাবা-চাচারা পাঁচ ভাই এবং এক বোন। বংশের বড় মেয়ে হওয়ায় আদরের কমতি হয়নি তার। পরিবারের বড় সন্তান এবং খুব আদুরে হওয়ায় তার বাবা তার কোন ইচ্ছাকে অপূর্ণ রাখেননি, চাওয়ার সাথে সাথে এনে দিয়েছেন সবকিছু, সাথে স্বাধীনতাও দিয়েছেন অনেক। দিশার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং শৈশব-কৈশোর সবই কেটেছে বাগেরহাটের সৈয়দ মহল্লা গ্রামে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তির প্রশিক্ষক ছিলেন দিশা। কিন্তু, স্বামীর চাকরিস্থল কক্সবাজারে হওয়াতে দিশাকে চাকরিটা ছাড়তে হয়। তাছাড়া তার চার বছরের একটা মেয়ে আছে, যে তার বাবাকে ছাড়া থাকতে পারে না। মেয়ের দিকে তাকিয়ে চাকরিটা তিনি ছেড়ে দেন।

চাকরি ছাড়ার পর খারাপ লাগতো সবসময়, মনে হতো কিছু করবেন, কিন্তু তা যে অনলাইন বিজনেস হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেননি।

এর পেছনে একটা গল্প আছে। একদিন বাসায় বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী সেমাই পিঠা বানান তিনি, সাথে হাঁসের মাংস। খাবারের ছবিগুলো একটা গ্রুপে পোস্ট করেন। ছবি দেখে গ্রুপের সবাই বিস্তারিত জানতে চান। বিশেষ করে পিঠার মেশিনটার দাম জানতে চান অনেকে।

‘আমি সেলার না, তবু অনেক আপু অর্ডার করে ফেললেন। পিঠা বানানোর মেশিনটা পাঠাতে রিকোয়েস্ট করলেন। বিকাশে টাকাও পাঠিয়ে দিলেন,’ বলতে বলতে দিশা জানালেন ‘সেই থেকে জার্নিটা শুরু’।

উদ্যোক্তা দিশা বর্তমানে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী সেমাই পিঠার মেশিন এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প নিয়ে কাজ করছেন। সেমাই পিঠার মেশিনটা পিতলের তৈরি। যুগ যুগ ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছেন। একটা কিনলে যুগ পার হয়ে যায়। কিন্তু আধুনিক সময়ে এসে পিঠা তৈরির মেশিনটা প্রায় হারাতে বসেছিল। দিশার হাত ধরে সেই ঐতিহ্যই যেন আবার নতুন দিশা পেয়েছে।

তাঁর এখন ছোটখাটো একটা কারখানা আছে বাগেরহাটে। সেখান থেকে সরাসরি নিয়ে আসেন তার গোডাউনে। সাতজন কর্মী এখন তার সাথে কাজ করছেন। অনলাইনে তার পেজের নাম ‘দেশীয় ঐতিহ্য’। যুক্তরাজ্য, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, অস্ট্রেলিয়ায় তার পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৭টা জেলায় তিনি তাঁর পণ্য সেমাই পিঠার মেশিন এবং মাটির তৈজসপত্র পৌঁছে দিতে পেরেছেন। মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো পণ্য বিক্রি করেন তিনি এবং দিন দিন তা বাড়ছে।

নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা বার্তাকে দিশা জানান, ‘সব সময় মনে হতো নিজে কিছু একটা করা দরকার, নিজের একটা পরিচয় দরকার। সবাই এখন কম বেশি অনলাইনে বিজনেস করে। আমিও শখ করে কোনো টাকা ছাড়াই বিজনেসটা শুরু করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, সফলতার দিকে এক এক ধাপ করে এগোনোর চেষ্টা করছি।’

উদ্যোক্তা দিশা বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চান; শুধু দেশেই না দেশের বাইরেও। দেশীয় ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী আরও পরিচিত করানোই তাঁর স্বপ্ন।

সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here