উদ্যোক্তা রাসেল গুজরাল

চিত্রশিল্পী সতীশ গুজরালের মেয়ে, শিল্পসত্ত্বা তাই অনেকটা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন রাসেল গুজরাল। কাজে লাগিয়েছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে। সেই আশির দশক থেকে রাসেল ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ১৯৯৩ সালে নিয়ে আসেন নিজের লাইফস্টাইল রিটেল সংস্থা ক্যাসা প্যারাডক্স (Casa Paradox)। তারও পরে তৈরি করেন পকেট ফ্রেন্ডলি ইন্টেরিয়র ব্র্যান্ড ক্যাসা পপ (Casa Pop)। নয় নয় করে তিন বছর হয়ে গেল তারও।

প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই রাসেল গুজরালের। তাঁর শৈল্পিক যুক্তি, স্বাদ, রঙের ব্যবহার, কল্পনার শক্তি এবং ভারসাম্য, যার নিটফল ক্যাসা ডক্স ও ক্যাসা পপ।

‘প্যাশন দিয়ে শুরু হয়েছিল। গতি পেল কমিটমেন্টে। ভাগ্য এবং সুযোগ সঙ্গে ছিল। আমার মনে হয় না কেউ ভবিষ্যএৎ দেখতে পায়। একটা জার্নি কতটা হতে পারে কারও জানান নেই। পরিবেশ বদলাচ্ছে, মানুষের স্বাদ বদল হচ্ছে। সব কিছু সঙ্গে মানিয়ে রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। গত ৩০ বছর ধরে ঘরসজ্জায় এভাবে রুচির সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে- বলেন উদ্যোক্তা রাসেল’।

সারাদেশে বহু বিখ্যাত জায়গার ইন্টেরিয়রের পেছনে রয়েছে রাসেল গুজরালের মেধা। ক্যাসা প্যারাডক্স রাসেল গুজরাল এবং স্বামী নবীন আনসালের ব্রেন চাইল্ড। আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং ব্যবসা ছিল সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে আসবাব এবং ঘর সাজানোর নানা জিনিসপত্রও সংস্থার অঙ্গ হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসেলের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন পাওয়া যায় ক্যাসা প্যারাডক্সে। রাসেলের উদ্ভাবনী ও কল্পনা শক্তির মিশেলে ক্লায়েন্টের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলেন নির্মাণ শিল্প এবং ঘরসজ্জায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ডিজাইনও পাল্টেছেন। ফলে তাঁর ডিজাইনে সবসময় আধুনিকতার ছোঁয়ার সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্যেরর ছাপ সবকিছুর থেকে আলাদা করে চোখে পড়ে।

রাসেলের ইউনিক স্টাইল উচ্চবিত্তদের মন কাড়ে। সঙ্গে বিদেশেও বেশ সমাদৃত হয়। তাঁর ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারাল ডিজেস্ট, ইল্লে ডেকর, ডব্লিউ, হার্পার্স বাজার, ভগ’র মতো বিশ্বনন্দিত ম্যাগাজিনে চর্চার জায়গা করে নিয়েছে।

এসব প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা রাসেল বলেন, ‘আমি এমন পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে আমার বাবা একজন চিত্রশিল্পী, ভাষ্কর, স্থপতি। ফল গাছ থেকে বেশি দূরে পড়ে না। তাই বাবার পথেই হাঁটবো এটাই স্বাভাবিক ছিল। আমি অ্যাপ্লাইড আর্ট বেছে নিয়েছি। আমার বাকি দুই ভাই-বোনও তাই। ভাই স্থপতি, বোন টেক্সটাইল এবং জুয়েলারি ডিজাইনার এবং আমিও বহুস্তরীয় লাইফস্টাইল ডিজাইনার। ফুলদানি থেকে মোমদানি, সোফা, কায়দার টেবিল, কুশন, ছবির ফ্রেম, ট্রে, গিফট বক্স সব পাওয়া যায় ক্যাসা প্যারাডক্সে’।

উদ্যোক্তা তাঁর ভাবনাকে সবসময় ডানা মেলতে দিয়েছেন। তার ফলে যা প্রকাশ পেয়েছে তাতে আধুনিকতা এবং সমসাময়িক ভাবনার ছাপ বিদ্যমান। আর সেই কারণেই তাঁর স্টাইল হল ঐতিহ্যের মিশেল, যাকে বলা যায় ‌‘কনটেম্পরারি ক্লাসিক’।

এখন মানুষের স্বাদ অনেক বদল হয়েছে। আমরা যেমন আধুনিক ট্রেন্ডকে গ্রহণ করছি তেমনি ঐতিহ্যে এবং পুরনো অভ্যাসকেও মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারছে না । লাইফ স্টাইল অনেক পাল্টে গিয়েছে। একান্নবর্তী পরিবার থেকে এখন ছোট পরিবারে থাকা অভ্যেেস প্রায় সবার। আর্থিক অবস্থা বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মুক্ত অর্থনীতিতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যাচ্ছে। সেই সবের সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে গিয়ে উদ্যোক্তা রাসেলকেও তাঁর ভাবনা, শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বারবার পাল্টাতে হয়েছে।

তিনি মনে করেন, ‘কলকাতার মানুষ অনেক বেশি ভারতীয়ত্বে বিশ্বাস করেন। সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। মুম্বাই, দিল্লি থেকে সেসব হারিয়ে যাচ্ছে। সেদিক থেকে কলকাতা এখনও অনেক বেশি শেকড়ের কাছাকাছি। প্রতিযোগিতায় না গিয়ে পুরানো ঐতিহ্যে, শিল্পকে আঁকড়ে ধরে নিজের ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাসা পপ।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here