ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মিলে শুরু করেছেন অলাভজনক সংস্থা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যার নাম দিয়েছেন ‘পাশে আছি’ ইনিশিয়েটিভ। পেজটির মাধ্যমে প্রদর্শন করছেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বই, শখের হাঁড়ি, সরা, মাটির টেপা পুতুল, মাটির খেলনা, বাঁশ-বেতের ঝুড়ি, তাঁতের লুঙ্গি ইত্যাদি পণ্য সামগ্রীর।

কো-ফাউন্ডার হিসেবে থাকা সাত শিক্ষার্থী হচ্ছেন- তাহমিদ হাসান, রাফিউল মাহমুদ চৌধুরী, সাজিদ রেহমান অভিক, জাইমা হামিদ জোয়া, আনিকা আহসান, আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ, আহমেদ রিফাত কবির ও শাহ জামিল নিলয়।

এই পেজের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কো-ফাউন্ডার সাজিদ রেহমান অভিক জানান, প্যানডেমিকের সময় যখন আমরা দেখতে পাই অনেক মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তার পাশে বসে আছে, কিন্তু কাজ-খাবার কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়নি বিভিন্ন পণ্যের বিক্রেতা এবং রাস্তায় চলাচলের পথে রিক্সাওয়ালা ও সিএনজিওয়ালা কেউ কোন প্রকার সাহায্য পাচ্ছিলো না। রাস্তাগুলো সম্পূর্ণ ফাঁকা এবং আহারের জন্য মানুষ বিভিন্ন জায়গায় হাত পেতেও খাবার পাচ্ছিল না। তা দেখে উদ্যোক্তাদের মনে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা আসে। এর পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পেজটি চালু করেন উদ্যোক্তারা মিলে।

দ্বিতীয় পরিসরে উদ্যোক্তা তাহমিদ হাসানের কাছ থেকে ব্যবসায়িক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পেজটির কোন লাভ তারা এখন পর্যন্ত নেননি। যতটা লাভ আসে সবটুকুই গরীব মানুষের পেছনে খরচ করেন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য উজার করে কিছুটা কষ্ট কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন সবাই মিলে। চেষ্টা করেন অসহায় মানুষকে কিছুটা হলেও খাবার অথবা জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করার। তারা নীলক্ষেতের বই বিক্রেতাদের দশ দিনের খাবার হিসেবে ল, ডাল, তেলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে তাদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন।

তৃতীয়জনের কাছ থেকে যখন গল্পের শুরুটা জানতে চাওয়া হয়, উদ্যোক্তা রফিউল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথমে তারা সবাই মিলে ৫০ জন রিক্সাওয়ালার খাবার নিজের টাকা দিয়ে প্রদান করা শুরু করেন। এর পর নীলক্ষেতের প্রায় ৮০ জন বই বিক্রেতাকে সাহায্য করা শুরু করেন। এর পর যখন এই সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখার চিন্তা করেন, তখন আরো বড় পরিসরে সবাই মিলে তিনটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনটি প্রজেক্টর নাম হল- গ্রন্থমঙ্গল (বই নিয়ে), সুরক্ষা (স্বল্পমূল্যে মাস্ক এবং অক্সিমিটার) ও মাটির গান (বাংলাদেশের কারুশিল্প নিয়ে)।

তিনি আরো বলেন, প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছেন। ২৫ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন এ পর্যন্ত। এভাবেই চলে যায় একটি বছর।

২৪ মার্চ তাদের উদ্যোগের এক বছর পূর্তি। শুরুতে পেজটিতে পণ্য বিক্রি করা হয় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এর পর আরো অনেকে এগিয়ে আসে অর্থনীতি বিভাগ থেকে। পাশাপাশি এই সব কাজ দেখার পরে অনেকেই অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসেন দেশ-বিদেশ থেকে। ‘পাশে আছি’ এমন একটি অলাভজনক সংস্থা যারা মৌলিক খাবারগুলো ক্রয় করা যাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সেই নিম্ন আয়ের লোকদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে সব উদ্যোক্তা একত্রে বলেন, দেশের বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া চারু ও কারুশিল্পকে বাঁচিয়ে তোলা, দেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন শিল্পীর কাজের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়া তাদের মূল উদ্দেশ্য।

নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ হিসেবে বলেন, ‘কাজে লেগে থাকতে হবে, হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। শুরুতেই সাফল্যের দেখা কেউ পাবে না, ধীরে ধীরে কাজ করতে করতে পরিচিতি বাড়বে’৷

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here