সময়ের বয়ে চলা স্রোত আমাদের নিয়ে এসেছে নতুন এক ইতিহাস লিখাতে । এই ইতিহাস যেন তৈরি করছে এক মৃত্যুর মিছিল। মানবতার উদয় ভোঁরে আর পাখির ডাক শোনা যায় না , ভেসে আসে কান্নার জোয়ার । সকলের মায়াভরা মুখে দেখি বিষন্নতার ছাপ । হৃদয়ের গহীনে মৃত্যু ভয়ের আতংক চাপা হয়ে আছে । সেই সাথে দেখা দিয়েছে অসহায়,দারিদ্র মানুষের খাবার সংকট । এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ ।

Covid-19 নামটির সাথে আমরা সকলে কম বেশি পরিচিত । এই ভাইরাসটি আলোক উজ্জ্বল মুক্ত নীল আকাশে যেন কালো মেঘ হয়ে এসেছে । বিশ্বের সকল জনপদ আজ এই ভাইরাসের কারণে গৃহবন্দী । স্বপ্ন প্রিয় মানুষের স্বপ্নে ধেয়ে আসা যেনো এক কালবৈশাখী ঝড় । মানবতার দুর্দিন যাচ্ছে, এই দুর্দিনে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা আমদের জন্য জরুরি । এই নির্মম পরিহাস কে সামনে রেখে একটি উদ্যোগ নেয়া। ঘোড়াঘাট থানার রাণীগঞ্জ এলাকার গুটি কয়েক স্টুডেন্ট মিলে তৈরি করে ফেললো একটি সংগঠন। নাম দিলো অরুণোদয় ফাউন্ডেশন। ভোরের নতূন সূর্যোদয়ের মতই অসহায় দরিদ্র মানুষের যেকোন বিপদে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন নিয়ে সব সময় পাশে থাকায় হবে তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অরুণোদয় ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা আতিকুর রহমান টুকু জানান, আমাদের পথ চলা দেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে ভিড়তে থাকে অনেকে,পাশে এসেছে The Stark Community।

বাইরের দেশের লকডাউনের খবর দেখে সব সময় মনে হতো যদি আমদের মত এমন জনবহুল দেশে এমন হয় কি করবো আমরা। উহানের সেই কালো মেঘ যখন বাংলার নীল আকাশে উদয় হয়েছিলো, দেশে যখন প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয় তখনই মনে হয় আমাদের কিছু করা দরকার । সেই থেকে আমাদের পথ চলা । লকডাউনে আমরা ঘরে বসে থাকিনি,বেড়িয়ে পড়েছি মানবতার সেবাই । চলার পথে আমরা থেমে যাইনি । এমন কোন দিন ছিলোনা যে আমরা মানুষের দোড়গোড়ায় যাইনি। প্রায় প্রতি দিন আমরা কোন না কোন কাজ করেই চলেছি ।এদেশের অসহায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষে লিফলেট হাতে ঘুরেছি বাড়ি থেকে বাড়িতে গ্রামের পর গ্রাম । সেই সাথে অসহায়, অসচেতন মানুষকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান প্রদান করেছি । মানুষকে সচেতন করার লক্ষে যখন মানুষের দুয়ারে দাঁড়িয়েছি মানুষের ক্ষুধার্ত , মলিন মুখ গুলো আমাদের হৃদয়কে ব্যথিত করেছে। এই চাপা কান্না ভাড়াক্রান্ত মুখ গুলোতে একটু খাবার তুলে দিতে আমরা মরিয়া হয়ে পরেছিলাম । নিজেদের পকেট খরচের টাকা বাঁচিয়ে ছোট ছোট করে তাদের তরে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করলাম আমরা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর ন্যায় সংগ্রহ হতে থাকে অর্থ । অবশেষে সফলতার দ্বার প্রান্তে পাড়ি জমালাম আমরা । ১৭০ এর অধিক পরিবারের হাতে তুলে দিলাম খাদ্যদ্রব্য। তাদের অশ্রুজল চোখ গুলোতে একটু খুশির আভা দেখে ভরে গেলো আমাদের অশান্ত হৃদয় গুলো । কিন্তু এমন আরো অসংখ্য পরিবার আছে যাদের পাশে আমরা এখন সহযোগিতার হাতটা বাড়াতে পারিনি । আমদের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের অবাক চাহুনি,তাদের মায়াভরা মুখগুলোতে আমারা একটু হাঁসি ফুটাতে চায় ।

হে মানবতা প্রেমিক,

বারিয়ে দাও হাত ।

দেখিতে চাও যদি,

হাসি মাখা প্রভাত।

এই প্রসংগে অরুণোদয় ফাউন্ডেশনের এর প্রতিষ্ঠাতা আরো বলেন, আজ ১৭০ পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটানোর মাধ্যমে শুরু করলাম যাত্রা । সঙ্গে ছিলো ছোট-বড় অনেকে । আজকের এই আয়োজন আমাকে এক তিক্ত বাস্তবতার সম্মুখীন করেছে । আমি দেখেছি চামড়া কুঁচকানো এক বৃদ্ধ কে যিনি শুয়ে আছেন বেড়াহীন চিলেকোঠার নিচে। আরও দেখেছি নিস্তেজ এক মানুষ কে যে কিনা শারিরীক অক্ষমতার বেড়াজালে বন্দি, মনের অনন্দে নাড়াতে পারে না তার পা আর বাহুদ্বয়কে । আহ জীবনের কি নির্মম পরিহাস । মনের অজান্তেই দুচোখ হয়েছে অশ্রুসিক্ত। এ কেমন বেঁচে থাকা ।এই বেঁচে থেকেও না থাকা এবং অসহায়,দরিদ্র মানুষগুলোর দিকে তাকিয়েই এই খাদ্যদ্রব্য বিতরণ কর্মসূচি । আজকে আমরা সফলতার সাথে আমাদের প্রথম কর্মসূচি-১ সমাপ্ত করেছি।

দ্বিতীয় কর্মসূচির প্ল্যানিং নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আগামীতে আরও ৫০০ পরিবারের হাতে খাদ্যদ্রব্য তুলে দিতে চায় অরুণোদয় ফাউন্ডেশন। শুধু করোনা মোকাবিলায় খাদ্যদ্রব্য নয় ভবিষ্যতে যেকোন বিপদে অসহায় দরিদ্র মানুষের ঢাল হতে চায় ফাউন্ডেশন এর সদস্যরা।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here