মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে নতুন করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। নতুন চারটিসহ মোট ৫টি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

আজ রোববার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও কেন্দ্রগুলো প্রেস কনফারেন্সটি সরাসরি সম্প্রচার করে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা ঘোষণার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। আমার বিশ্বাস আমরা এই সংকট মোকাবেলা করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে আমি রপ্তানিমুখী শিল্পকর্মী ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা (জরুরী) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি এবং আজ আমি নতুন করে ৬৭,৭৫০ কোটি টাকার চারটি নতুন আর্থিক উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি।’

লিখিত ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বরাদ্দসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ দাঁড়াবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ২২ শতাংশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, পূর্বে এবং আজকে ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুড়ে দাঁড়াবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে তাঁর সরকার তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘ-মেয়াদী- এ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আমি এখন ৪ টি কার্যক্রমের বিষয়ে তুলে ধরছি। চারটি প্রোগ্রাম হ’ল: জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, একটি উদ্দীপনা প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা নেট কাভারেজ প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বৃদ্ধি করা।’

চারটি প্যাকেজের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।

শেখ হাসিনা তাঁর দ্বিতীয় প্যাকেজে বলেন, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) এর সুবিধা বাড়ানো: ব্যাক টু ব্যাক এলসি- এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফ-এর বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, ইডিএফ-এর বর্তমান সুদের হার এলআইবিওআর-লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার্ড রেট + ১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২ দশমিক ৭৩%) হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।

চতুর্থ প্যাকেজে শেখ হাসিনা বলেন, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কীম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। তিনি বলেন, এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী এই বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য রপ্তানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি বিশেষ নজর প্রদানের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘ এক্ষেত্রে আমি সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুড়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বান সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে – সে জাতিকে কোন কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ বিশ্ববাসীকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করুন।’ তিনি আ্ল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দেশের জনগণসহ বিশ্বের সকল মানুষের সুরক্ষাও কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here