নওগাঁ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য থানা আত্রাই। আত্রাই নদীর নামানুসারে এই এলাকার নামকরণ করা হয় আত্রাই। সেই আত্রাইয়ের তরুণ সদস্যদের একটি ক্ষুদে সংগঠন “সমর্পণ” যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। আত্রাইয়ের মেধাবী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করার পাশাপাশি আত্রাইয়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে সমর্পণ এর পথ-চলা শুরু

সৌরজিত সরকার এবং ফাত্তাহুল ইসলাম শিমুল আত্রাইয়ের দুইজন মেধাবী তরুণ ছাত্র; তাঁদের মাথায় প্রথম এই “সমর্পণ” সংগঠনের ধারণা আসে। তাঁদের সেই ধারণাটি অন্য বন্ধু এবং বড় ভাইদের সমন্নয়ে গঠিত হয় “সমর্পণ”। প্রাথমিক পর্যায়ে সৌরজিত, শিমুল, ইসারত, বৃষ্টি, গালিব, সুমন, রুবেল, সেতু এরকম ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় “সমর্পণ”। পরবর্তীতে আত্রাইয়ের আরো অনেকে সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ত হয়। যার মূল উদ্দেশ্য সমাজসেবামূলক কাজ করা। বর্তমানে সংগঠনটি ৪১ জন সদস্যের মাসিক হারে দেওয়া (১০০ টাকা) অর্থ সহায়তা দ্বারা পরিচালিত হয়।

২০১৪ সালে ১১ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের মধ্যে ঈদের পোশাক বিতরণের মধ্য দিয়ে সমর্পণের সামাজিক উদ্যোগের যাত্রা শুরু। এছাড়াও প্রত্যেক ঈদে বাচ্চাদের পোশাক বিতরণের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ, বন্যার সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছে “সমর্পণ”।

বিজ্ঞান মনস্ক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ২০১৫ সালে আত্রাইয়ে একটি বিজ্ঞান মেলার আয়োজনও করেন সংগঠনটি।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের পাশাপাশি আত্রাইও যখন লকডাউন প্রায় তখন এই মহামারিতে “সমর্পণ” আত্রাইয়ের অসহায় ও অসচ্ছল ৬০ টি পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর একটি ব্যাগ বিতরণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের সমন্নয়ে ব্যাগটি প্রস্তুত করেন। যেমন- ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি ময়দা, ১ লিটার তেল ও হাত ধোয়ার সাবানের সমন্নয়ে একটি ব্যাগ একটি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন এবং তাঁদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সর্বদা সচেতন থাকার পরামর্শ প্রদান করেন।

‘আত্রাই’ নামে একটি ফেসবুক পেজের পরিচালকরাও “সমর্পণ” এর সাথে একাত্বতা পোষণ করে যৌথভাবে তাদের সাথে “Fight Against Corona Disaster” নামে কর্মসূচি পালন করছেন। যেখান থেকে খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝে এই কর্মহীন মহামারিতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে জনসচেতনতা তৈরী, হোম কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া ইত্যাদি বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।

“সমর্পণ” সংগঠনের অন্যতম একজন সদস্য উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আত্রাইয়ের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে আমাদের সহযোগিতা করছেন। আমরা খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করেছি। এভাবে আমাদের প্রতিটি সদস্যের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় সমর্পণ এগিয়ে যাচ্ছে মানবতার সেবায়। সমর্পণ আমাদের কাছে একটি পরিবারের মতো”।

তাঁরা আরো জানান, অতীতের মতো এবারো আমরা সফলভাবে সঠিক মানুষদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিতে পেরেছি। এই সামান্য সহযোগিতা করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে কর্মহীন মানুষের উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করছি। আর এই কাজে যাঁরা বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, কারণ তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের এই উদ্যোগ অধরা রয়ে যেত।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here