উদ্যোক্তা- আসিফ চৌধুরী ও সাকিনা আফরোজ নিভা

আসিফ চৌধুরী, বাবা আলী এরশাদ একজন সাবেক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং মা হাসিনা বেগম গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। বড় হয়েছেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী নিজ বাড়িতে। পড়াশোনা এসএসসি মতিঝিল মডেল স্কুল, এইচএসসি ইম্পেরিয়াল কলেজে এবং বিবিএ রয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করা হয়নি। ব্যবসা হিসেবে ঠিকাদারি পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। নিজস্ব কোম্পানি আছে মুসা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে। পাশাপাশি ইভেন্ট অর্গানাইজ করে থাকেন। ইভেন্ট অর্গানাইজেশনের নাম নকশি ইভেন্ট। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন এক্সিবিশন করেন তিনি।

নিজের উদ্যোক্তা হওয়া প্রসঙ্গে আসিফ চৌধুরী বলেন, অনেক আগে থেকেই শুরু যাত্রাটা। যেহেতু আমি তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। আমি অনেক ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করেছি। যেহেতু আমি একজন ব্যবসায়ী, আমি দেশি-বিদেশি বুটিকস থেকে শুরু করে আমদানিকৃত কসমেটিকস এবং বিভিন্ন শুকনো খাদ্যদ্রব্য নিয়ে কাজ করছি। আমার সঙ্গে সহযোগী বলেন আর পার্টনার বলেন সকল ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর অবদান অপরিসীম। আমার স্ত্রী মূলত আমার অনলাইন সাইডগুলো দেখাশোনা করছে। আমি এবং আমার স্ত্রী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি বলে মনে-প্রাণে উদ্যোক্তাদের জন্য সম্মান ধারণ করতাম। সবসময় একজন সফল উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখতাম। ব্যবসা ছিল আগে থেকেই, কিন্তু গত বছর যখন করোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে সকল ব্যবসায় ভাটা পড়তে শুরু করে। অনেক টাকার মালামাল আটকে যায় এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। নতুন কোন কিছুই মাথায় আসছিলো না। কথায় আছে, যেখানে সব শেষ সেখানেই হয়ত সৃষ্টিকর্তা নতুন কোন শুরু রেখেছেন। আমার নতুন উদ্যোগের যাত্রা তখন থেকে শুরু। আমার উদ্যোগ হোমমেইড কটকটি/হানিকম্ব।

রান্নার প্রতি দুর্বলতা ছিল অনেক আগে থেকেই। তাই এই উদ্যোগ নিতে বেগ পেতে হয়নি। কটকটি বানিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীকে এক দিন ডেকে তুলে একটু টেস্ট করতে বলি, সে মুখে দিয়ে ঘুমের ঘোরে বলে উঠল, ‘কটকটি পেলে কোথায়’! তখন মনে হল আমি সাকসেস হতে পেরেছি কটকটি বানাতে। যেটা আমাদের ছোটবেলার সবচেয়ে ক্রেজি ডেজার্ট আইটেমের মধ্যে একটা ছিল। এরপর একটি পেইজ খুললাম ‘Kotkoti Bhai-কটকটি ভাই’ নামে। ব্যাস, রাতারাতি আমাদের কটকটি সবাই সাদরে গ্রহণ করল।

যেহেতু আমি কটকটি শুরু করি আমার বাসায় থাকা উপকরণ দিয়ে, যখন থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করি তখন এর পেছনে আমার মূলধন ছিল মাত্র ৫শ’ টাকা। আমি কটকটির উপর অনেকগুলো ভেরিয়েশন এনেছি যেমন চিনির কটকটি, গুড়ের কটকটি, বাদাম/নাটি কটকটি, মিক্সড কটকটি, শনপাপড়ী, রশকদম ইত্যাদি। আমার চারজন কর্মী এবং একজন সাহায্যকারী আছেন। কারখানা এখনো শুরু করিনি, তবে আমার বাসার একটি বড় রুমকে আমি এই ব্যবসার জন্য ব্যবহার করি। ভবিষ্যতে যখন দেশের পরিস্থিতি ভালো হবে কারখানা চালু করার আশা আছে।

আমার অনলাইন পেইজ তো অবশ্যই আছে ‘Kotkoti Bhai-কটকটি ভাই’ নামে। অনলাইনে প্রথম আমরাই এ রকম একটা ইউনিক চিন্তা নিয়ে শুরু করি। কিন্তু রিসেন্টলি কিছু পেইজ আমাদের পেজের পণ্যের ছবি এবং নাম চুরি করে পেজ খুলেছে। এরা কোন অবস্থায় আমাদের পণ্যের মানের সমান করতে পারছে না। তাই কিছু গ্রাহক দিধান্বিত হচ্ছেন এবং এদের থেকে কিনে প্রতারিত হচ্ছে। তারা আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। এটা আমাদের জন্য একটু বিব্রতকর পরিস্থিতি। আমরা গ্রাহককে বোঝাতে সক্ষম হই যারা না আসে তাদের তো আর বোঝানো সম্ভব হয় না। যেহেতু এটি একটি ট্রেডিশনাল ডেজার্ট। মানুষের আবেগ কাজ করে কটকটির সঙ্গে। বিষয়টি দুঃখজনক।

আমাদের এখনও দেশের বাইরে পণ্য পাঠানো হয়নি। তবে কিছু গ্রাহক আমাদের থেকে কিনে দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন এবং তারা যথেষ্ট ভালো প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। দেশের সব জেলায় আমরা ডেলিভারি দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সুন্দরবন কুরিয়ার, এস.এ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। এটি যেহেতু ঘরে তৈরি খাবার পণ্য, তাই অর্ডারের ভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়। প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রির টার্গেট করা হয়।

উদ্যোক্তা আসিফ

আসিফ চৌধুরী বলেন, উদ্যোক্তা পেশাকে সম্মান করার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়া। আর এই পণ্য ছিল আমার ইউনিক পণ্য। নব্বই দশকের পর থেকে যখন কটকটি হারিয়ে যাচ্ছিল, একে বর্তমান সময়ে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা থেকে এই পণ্য বেছে নেয়া।

তিনি বলেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এই পণ্য নিয়ে অবশ্যই অনেক বড়। আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। আমার পরিকল্পনা এই পণ্য ব্র্যান্ড হবে। সঙ্গে যুক্ত হবে নানা রকম ফিউশন। নতুন নতুন নামকরণ এবং পুরানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা। আমার ব্র্যান্ড এক নামে পরিচিতি পাবে এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ হল- যে কোনো পেশা যেটা সবচেয়ে ক্ষুদ্র হোক না কেন প্রথমে সম্মান করুন। এরপর নিজের জন্য যেটা সহজ সেটি বেছে নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন! আর আপনার পণ্যের প্রচারনার দায়িত্ব নিজে নিন। দিন শেষ আপনি জয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ!

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here