উদ্যোক্তা মোসাঃ শারমিন ফেরদৌস

হাতের কাজের পোশাক পড়তে খুব ভালো লাগতো, সেই ভালোলাগা থেকে নিজে শিখলেন পোশাক তৈরি। কিছু দিন পর পর নিজের জন্য হাতের কাজের নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে থাকলেন। বলছি মৃত শামসুল হুদা ও রওশন আরা হুদার কন্যা মোসাঃ শারমিন ফেরদৌসের সাফল্যের গল্প।

গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাটে হলেও জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা সব কিছুই রাজশাহী সদরে। শহীদ নজমুল হক স্কুল থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং সর্দ ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। ২০০৯ সালে তিনি ভাবলেন আর শুধু নিজের নয় বাণিজ্যিকভাবে কাজ করবো, ২০১০ এ শুরু করলেন কাজ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সুরমা হস্ত শিল্প’। আর তার ফেসবুক পেজের নাম ‘সুরমার আঙিনা’। খুব কম পুঁজি ছিল শুরুতে, তাই পণ্য উৎপাদনের সংখ্যাও ছিল কম। শুধু ওয়ানপিস, টুপিসে কাজ করতেন, মাসে ৩/৪ টি অর্ডার থাকত।

শারমিন ফেরদৌস তার এ উদ্যোগকে বড় পরিসরে রূপ দিতে চিন্তা করলেন ব্যাংক ঋণ নেবেন, বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য ঘুরে ব্যার্থ হলেন, কিন্তু হাল ছাড়লেন না। ২০১৬ তে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাতলুব আহম্মেদ রাজশাহী গেলে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিলেন রাজশাহীর ২৫ জন উদ্যোক্তাকে ১ লক্ষ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। এই খবরটি যেন আবারো শারমিন ফেরদৌসের মুখের হাসি ফিরিয়ে আনলো। তিনি ঋণের জন্য আবেদন করে ১ লক্ষ টাকা পেলেন। সেটি দিয়ে আগের তুলনায় তার কাজের পরিধি বৃদ্ধি করলেন। সুরমা হস্ত শিল্পে তিনি কর্মী রাখলেন। সুরমা হস্ত শিল্পের পণ্য যখন চারদিকে প্রশংসা কুড়াচ্ছিলেন তখন শারমিন ফেরদৌস আরো বড়ো চিন্তা করলেন। খুচরা বিক্রয়ের পাশাপাশি পাইকারিতেও দিতে শুরু করলেন পোশাক। অনেক নারী তার থেকে পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করলেন।

২০১৭ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নেন, ব্যাংক ঋণ নেয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা মত দিলেন না। তারা বললেন, নিলে তোমায় একা চালাতে হবে। আমরা সহযোগীতা করতে পারব না। তাতেই রাজি হয়ে গেলেন শারমিন ফেরদৌস। তিনি নিজে সময়ের আগে ঋণ শোধ করতে সক্ষম হলেন। পরিবারের সবাই বুঝলেন তিনি পারবেন। এর পর থেকে সবাই পাশে দাঁড়ালেন। এসএমই সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ টির অধিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শারমিন ফেরদৌস।

মাসে ৩/৪ টি পণ্য উৎপাদন হতো আগে এখন সে সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে তার কর্মী সংখ্যা ৪৫০ জন। ওয়ান পিস, টুপিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থ্রিপিস, ফোর পিস, শাড়ি, কুশন কভার, বেবি আইটেম, ছেলেদের ফতুয়া, বিছানার চাদর ইত্যাদি।

দেশের বেশিরভাগ জেলায় শারমিন ফেরদৌসের পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে এবং দেশের বাইরেও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে তার পণ্য পৌঁছে গেছে। ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু উদ্যোগ এখন কয়েক লক্ষ টাকায় পৌঁছে গেছে।

শারমিন ফেরদৌস বলেছেন, ‘চাকরির জন্য আমি চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। এই ব্যার্থতায় দুঃখ নেই, বরং চাকরি করলে অন্যের অধীনে আমায় থাকতে হতো। উদ্যোক্তা হওয়ার পর আমি অনেক মেয়েকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছি এটিতে আমার জীবনের স্বার্থকতা জড়িয়ে আছে। চাকরি না পেলে বেকার বসে না থেকে কাজ শুরু করা উত্তম। আমি সেটাই করেছি। অনেক বাধা এসেছে সেগুলো একা মোকাবিলা করেছি এবং আজ আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। আপনারা যারা বেকার বসে আছেন তারাও আমার মতো কাজ শুরু করেন। আপনারাও সফল হবেন’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here