তরুণ সফল উদ্যোক্তা-কাজী সাজেদুর রহমান

স্কুল জীবন থেকেই আমি কখনো বিয়ের আসরের বাজি সরবরাহ, এরপর সরকারি অবসরপ্রাপ্ত টাইপরাইটারদের সাথে মিলে কলেজ গেটে টাইপ মেশিনের ব্যবসা ইত্যাদি যা আমার ব্যবসায়িক মনোভাবকে উন্মোচন করে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় আমার মনে কখনো চাকরি করার বাসনা আসেনি।

পান্থপথে এক মামার অফিসে যাতায়াত আমার ব্যবসা করার বাসনাকে আরো দৃঢ় করে তোলে। ছোট মামার কাছ থেকে ৫০,০০০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করি আন্তর্জাতিক দরপত্রের বিপরীতে বিদেশী কোম্পানীর লোকাল এজেন্সির ব্যবসা। আমি পি.ডি.বি ও আর.ই.বি তে মিটার সিল, মিটার ট্রান্সফরমার, সুইচ গিয়ার ইত্যাদি সরবরাহ করতে থাকি। আর এটাই ছিল আমার ব্যবসায়িক জীবনের শুরু করার প্রথম গল্প। যেখানে আমি বেশ সফলতার সাথেই ব্যবসা পরিচালনা করি।

কর্মরত কর্মীর সাথে উদ্যোক্তা সাজেদুর রহমান

কেন যেন আমার ভিতরে অশান্ত মন্টা নতুন কিছু করার বাসনা থেকে শান্ত হয়নি তখনও। কিছুদিন শেয়ার ব্যবসাতেও সপে দিয়েছিলাম। যা আমাকে অর্থ দিয়েছিল কিন্তু মনের সুপ্ত বাসনাকে দমাতে পারেনি।

মায়ের হাতের রান্না আর তাঁর কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর আকাঙ্ক্ষা আমাকে ব্যাকুল করে তোলে। কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই আমার। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি একটু সুযোগের অপেক্ষায়। তাই একদিন বিদ্রোহী মনের সব বাঁধা ভেঙ্গে ফোন করি মা কে। আর বলি ‘মা’ আমি তোমাকে হজ্বে নিয়ে যাবো। মা খুব অবাক হন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে ঠিকই সম্মতি জানায়। আর আমিও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি।

২০১০ সালের নভেম্বর মাসে মা কে নিয়ে পবিত্র নগরী মক্কার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেই। একদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার মাগরিবের নামাজের আগে মদিনা শরিফে আমি রোজা রাখায় একজন আরবি শেখ আমাকে ইফাতারের দাওয়াত দেয়। একটি কাপে চা আর একটি কাপে খেজুর। মনে হলো আমি স্বপ্নের কাছাকাছি। নতুন ধারণার জন্ম নিলো আমার। যার নাম পেপার কাপ।

কেপিসি পেপার কাপ

আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাই হয়তো আমার ভিতরেও সেই যুদ্ধ করে জেতার শক্তিটা বেশি কাজ করে। সিদ্ধান্ত নেই পেপার কাপ নিয়ে কাজ করার।

সিদ্ধান্ত অটল, তাই থামাতে পারেনি কেউ। নতুন পণ্য, নতুন ধারণা, বিপদ অনেক বেশি, কিন্তু পণ্যটা ভালো। ১০০% পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। দেশের পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই প্রয়োজন। শুরু হলো নতুন সংগ্রাম। পেপার কাপের ফ্যাক্টরি করতে হবে। নিজের হাতে বানাতে হবে এমন কিছু যা মানুষের উপকারে আসে। তাই ছুটে গেলাম মালেশিয়ার মালেক্স কোম্পানীতে। প্রাথমিক ধারণা পেলাম সেখানে। এরপর চীন। আদি থেকে অন্ত সার্বিক ধারণা নিয়ে ফিরে আসলাম দেশে। ব্যবসার নাম দিলাম কে.পি.সি. ইন্ডাষ্ট্রি।

চলবে…

তরুণ সফল উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান 
বর্ষসেরা এস এমই উদ্যোক্তা -২০১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here