মাসুমা সুলতানা-নারী উদ্যোক্তা

সংসার সকল নারীর জীবনের এক চরম সত্য, তাই সকল নারীর মতো আমিও সাংসারিক একজন। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে সংসারের পাশাপাশি পরিবার ও নিজের উদ্যোগে আজ আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজেকে একজন স্বাধীনচেতা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথটা অনেক উঁচু নিচু হলেও আজ ফিরে তাকালে সব স্মৃতি আমাকে অনুপ্রাণিত করে আরও ভাল কিছু করার জন্য ।

ঠাকুরগাঁ জেলার রানীশংকৈল সরকারী বলিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি করে দিনাজপুরে কলেজ শেষ করি। রাজশাহী কলেজ থেকে এনটোমলোজিতে স্নাতকাত্তর করি। আমার স্বামী একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। পড়াশুনায় বরাবর রেজাল্ট ভাল থাকায় পরিবার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। পড়ালেখা শেষে চাকরিতে যোগ দেই, তবে পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়।

উদ্যোক্তার কারখানায় হ্যান্ডপ্রিন্ট ডিজাইনের কাজ করছেন কর্মীরা

ব্যবসা করব এমন কোন চিন্তাই ছিলোনা তবে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনায় অটল ছিলাম।

কলেজ জীবন থেকেই নিজের নকশা করা, হাতে সেলাই করা, নিজের ব্লক ও বাটিকের কাজ করা জামা পড়তে খুব পছন্দ করতাম। এখন আমার করা নকশাগুলোতে অন্যদের সাজতে দেখলে অনেক ভালো লাগে। যখন দেখি মানুষ আমার বুটিকের নামেই আমাকে চেনে তখন আরো বেশি ভালো লাগে।

উদ্যোক্তার কারখানায় তৈরি হ্যান্ডপ্রিন্ট ডিজাইনের পণ্য

নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মনে করি কারণ, আজ আমার এই ব্যবসার উদ্যোগে একটি টেইলার্স এ ৪-৫ জন কারিগরের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নিজস্ব একটি কারখানাও গড়ে তুলতে পেরেছি সকলের সহযোগিতায় যেখানে ৭-৮ জন কারিগর নিজেদের কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে। সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি, খুব শীঘ্রই একটি আউটলেট উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।

আমার বুটিকটি প্রথমে শুধু ব্লক ও স্কিন প্রিন্ট দিয়ে শুরু করলেও এখন মসলিনের জামা ও শাড়ি, তাঁতের জামা ও শাড়ি, জামদানী শাড়িও রয়েছে । শুধু দেশে নয়, আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ বিদেশেও আমার পণ্যগুলো মানুষ অনেক পছন্দ করে ও সেখান থেকে অর্ডার দেয়।

বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ এবং নিজের ডিজাইনের পণ্য প্রদর্শন

ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কিছু প্রশিক্ষণ দরকার পরে। কারণ সবচেয়ে আগে নিজেকে দক্ষ হতে হয় এসব ক্ষেত্রে। তাই ব্যবসার শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেই। বিজিএমইএ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর কোর্স, এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে বিজনেসের মেনেজমেন্ট কোর্স, এফ কমার্স কোর্স সহ আরও অনেক ধরনেরই ট্রেনিং নিয়েছি বিভিন্ন সময়ে।

ব্যবসাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মেলাতেও অংশগ্রহণ করেছি। মেলা করার সার্থকতা হল, প্রত্যেকবার শ্রেষ্ঠ বিক্রয়কারী হিসেবে পুরস্কার পাওয়া।

একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে উদ্যোক্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন AWE এর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এই সংগঠনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। আমি আমার সাধ্যমতো  সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

মেলায় অংশ গ্রহনকালীন উদ্যোক্তার স্টলের চিত্র

নারী উদ্যোক্তার পাশাপাশি আমার পরিচয় হল আমি গৃহিনী এবং আমি মা। তাই একমাত্র ছেলেকে সময় দিয়ে  ঘরের কাজও সামলাতে হয়। ব্যবসা ও সংসার দুটো পাশাপাশি সামলাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি বহুবার তবে থেমে যাইনি।

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সব সময় চেয়েছি একা নয় সকল নারীদের নিয়ে হাতে হাত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। আমার ছোট্ট পরিসরের এই উদ্যোগটিকে দেশের আনাচে কানাচে এবং বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে চাই। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে নিজের দেশকে নতুন আঙ্গিকে ফুটিয়ে তুলতে চাই।

মাসুমা সুলতানা,
নারী উদ্যোক্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here