মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করছেন সফল উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমীন

ফাদার ক্লাউস বোয়েলে, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যে অকৃত্রিম বন্ধুরা একটি দেশকে সাজাতে বিশ্ব সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের অন্যতম। দুঃস্থ নারীদের সহায়তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবার উদ্দেশ্যে ফাদার ক্লাউস বোয়েলে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তরঙ্গ।

১৯৯৪ সালে জুয়োলজিতে মাস্টার্স এবং এম বি এ সম্পন্ন করে তরঙ্গতে যোগ দেন কোহিনূর ইয়াসমীন, পিছিয়ে পড়া ভাগ্যাহত নারীদের নিয়ে কাজ করবার ব্রত নিয়ে। ২০০০ সালে ফাদার বোয়েলে ফিরে যান জার্মানি। ১৯৯৪ সালে মাত্র দুইজন কর্মীকে নিয়ে পাটজাত পণ্যের কাজ শুরু করেন, নারীদের কাজ দিতে হলে চাই বিপুল কাজের অর্ডার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমীন

সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন কোহিনূর ইয়াসমীন। ১৯৯৬ সাল, ইউনাইটেড কিংডম থেকে প্রথম বায়ার আসলেন। চরম ধৈর্য্য এবং স্থিরতা নিয়ে বসে থাকতেন উদ্যোক্তা এবং নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে থাকা উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমীন।

একটি পণ্য কিনবে তুমি ? আমাদের একটি পণ্য কিনলে আমার দেশের একজন নারীর কর্ম সংস্থান হবে “বাংলাদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাস এবং উন্নয়ন সংস্থা এবং সেখানে কর্মরতদের সাথে ব্যক্তি হিসেবে বলেছেন এই কথা এবং বলেছেন বিশ্বের কাছে। উদ্যোক্তার একক প্রচেষ্টাতেই ইউ কে, ইটালী, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন সারা বিশ্বের শতশত প্রতিষ্ঠান তখন আজকের আঠারো হাজার আটশ নারী, হাজার হাজার কর্মের পথ প্রশস্ত করলো।

সেন্টারে কর্মব্যস্ত কারিগর

৩টি এবং ৩টি মোট ৬ টি ফুট মেশিন ৫ জন কারিগর  নিয়ে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে থাকেন নিরন্তর কোহিনূর ইয়াসমীন। অর্ডার বাড়তেই থাকে, মার্কেট বাড়তে থাকে। উদ্যোক্তা বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান গড়তে থাকেন।

২০০৮ সাল। অনেক কর্মী যখন কাজ চাইলেন এবং বিদেশ থেকেও বাড়তে থাকল চাহিদা ৩০ টি মেশিন ৫০ জন কারিগর হল। দুটি ইউনিট দিনে শতশত বহুমুখী পাটজাত পণ্যে দেশকে সমৃদ্ধ করতে থাকল। স্বাবলম্বী হতে থাকলো নারী। চার হাজার পাঁচশ ক্যাটাগরির পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে সারা বিশ্বের জন্য।

সদা হাস্যোজ্জ্বল উদ্যোক্তা ও কারিগর

বিশ্বখ্যাত টেনিস প্লেয়ার রজার ফেদেরার ব্যবহার করেন যে টেনিস ব্যাটের ব্যাগ, সেই ব্যাগটি উদ্যোক্তার সংস্থার তৈরি। ব্রিটিশ রাজপরিবারের দুই পুত্রবধূ কেট মিডলটন ব্যবহার করেন উদ্যোক্তার তৈরী ব্যাগ, আর তা তিনি ব্যবহার করেন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে। আর ছোট পুত্রবধূ  ডাচেস অব সাসেক্স অভিনেত্রী পুরো মেগান মার্কেল তার স্টুডিওর পুরোটাই সাজিয়েছেন উদ্যোক্তার তরঙ্গের পাটজাত পণ্য দিয়ে।

বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য

এতো গেলো বিখ্যাতদের কথা। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার কথা জানা যাক বিশ্বখ্যাত হ্যারডস, বি এন এ মিউজিয়াম, নোবেল পিস ফাউন্ডেশন নিচ্ছে মিউজিয়াম এর জন্য সুভেনিয়র ব্যাগ। এছাড়াও ইতালির ম্যাক্স এন্ড কো, ম্যাক্সমোরা, হোয়াইট কোম্পানি, জাপানের তাকাসিমায়া, তিতিকাকা, ই কোন এমন সব  তাবড় তাবড় প্রতিষ্ঠানে বিশ্বমানের বহুমুখী পাটজাত পণ্য বাংলাদেশের।

বাংলার পাট সত্যি বিশ্বমাত। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কারিগর এবং বাড়তে থাকে উদ্যোক্তার কর্ম পরিসর। লালমনির হাটের চর এলাকায়, দিনাজপুরের  পোলিয়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে, বরিশালে একদম মাছ ধরে যে নারী দিনাতিপাত করতেন তারা আজ এক একজন শক্তিশালী দুই হাত মেশিনের, দক্ষ কারিগর বাংলার সোনালী ফসলের।

কোঅরডিনেটরের সাথে উদ্যোক্তা

টাংগাইলে আইস ব্রেক হলো, নারী বসলেন তাঁতে, বান্দরবানে বসলো তাঁত। বাংলার পাটে বিশ্বমাত, সত্যিই যেনো বাংলার নারীদের হাতেই বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন। একটি দুটি ; হাজার হাজার ; লক্ষ লক্ষ কিংবা  কোটিপণ্যে একটি দেশকে ধন্য করে একটি দেশের পতাকা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং এ উদ্যোক্তা কোহিনূর ইয়াসমীন।

সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের সক্ষমতা তৈরী করে মেশিনে সুই সুতা তাঁতের শব্দে দক্ষ কর্মীর হাতে আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশের বহুমুখী পাটজাত পণ্য। উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এসএমই বিশেষজ্ঞ। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ইয়েমেন, আফ্রিকা, এই দেশগুলোর পিছিয়ে পড়া সকল নারীদের ট্রেনিং দেন যে ট্রেইনাররা সে সকল ট্রেইনারদেরও ট্রেইনিং দিচ্ছেন আজ বাংলার পাটের বহুমুখী পণ্য নিয়ে নিরলস কাজ করা উদ্যোক্তা কোহি্নূর ইয়াসমীন।

সেন্টারে উদ্যোক্তা কারিগরদের কাজ দেখছেন

মানুষের জন্য কাজ, ভীষণ দুঃখী নারীদের এগিয়ে যাওয়া এবং চ্যালেঞ্জ, তাদের হাতেই বিশ্ব পাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সোনালী পাটের আঁশের চকচকে আলোয় আলোকিত সোনার বাংলাদেশ।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here