তরুণ উদ্যোক্তা- পলাশ আহমেদ

বাবা-মা আর তিন ভাইয়ের সংসারে পলাশ আহমেদের বাবাই একমাত্র উপার্জক। তাই অনেকটা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়েই কেটেছে তার শৈশব। এরমাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।

সংসারের খরচ জোগাতে বাবাকে হিমশিম খেতে দেখে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করে নিজেই কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে শুণ্য হাতেই পলাশ চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়।

উদ্যোক্তার কফি শপে তৈরি নানান রকম কফি

শুরুতেই নিজের থাকা খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে যাতে চিন্তা করতে না হয় সেজন্য ঢাকার মগবাজারের কয়েকটা হোটেলে কাজের জন্য ঘুরলেন, কিন্তু কেউ কাজে নেয়নি। হোটেলের এক কর্মচারী তাকে অন্য একটা হোটেলে কাজ দিলেন যেখানে শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো। পরনের একটা পোষাকই ছিলো সম্বল।

বেতন ছাড়াই কাজ করলেন কয়েক মাস। তারপর একদিন বেতনের কথা বলতেই হোটেল মালিক কোনো বেতন দিবেন না বলে জানান। দুঃখভারাক্রান্ত  মন নিয়ে হোটেল ছাড়েন পলাশ।

পলাশের চাপ ঘরে কর্মরত কর্মীরা

এরপর বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রয়ের কাজ নিলেন পলাশ। সকাল ৬ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত কাজ করে বেশ কিছু টাকাও জমান। এভাবে ৮-৯ মাস চলার পর সিদ্ধান্ত নিলেন এবার নিজেই কিছু করবেন।

অল্পকিছু টাকা নিয়ে ফুটপাতে একটা চায়ের দোকান দিলেন। প্রথমদিন বিক্রয় হলো ১৬৫ টাকা। আশার আলো দেখলেন পলাশ। কয়েক প্রকারের চা আর কফি বিক্রি শুরু করলেন সেখানে। সাড়া মিললো অনেক। এভাবেই চললো বছর দেড়েক।

২০১২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর ভাবলেন ফুটপাতে আর নয়, নতুন উদ্যোগে ২ লক্ষ টাকা পুঁজি এবং দুজন কর্মী নিয়ে একটি দোকান ভাড়া নিলেন তিনি। নাম দিলেন ‘পলাশ ক্যাফে শপ’।

খাবার তৈরি ও পরিবেশনে ব্যস্ত কর্মীগণ

পরিচিত বন্ধু বান্ধবদের পরামর্শে ফেসবুকে একটা পেজও খুললেন এবং বিভিন্ন অকেশনে পেইজে নানান অফার দিতেন তার কফি শপে। সাড়া মিললো ব্যাপক। উন্নতি ঘটতে থাকলো ব্যবসায়ে। উদ্যমী হয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন তিনি।

২০১৮ তে এসে একটি রেস্টুরেন্ট দেয়ার মধ্য দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন উদ্যোক্তা। নাম দিলেন ‘পলাশের চাপ ঘর’। ‘পলাশ কফি শপ’ ও ‘পলাশের চাপ ঘর’ এ বর্তমানে ১৭ জন কর্মী নিয়ে ২২ লক্ষ্য টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা পলাশ আহমেদ।

পলাশের চাপ ঘরে তৈরি বিভিন্ন আইটেমের খাবার

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি জানান, “আমি আমার ব্যবসাকে আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে ২ থেকে ১০টি দোকানে উন্নিত করার শুধুমাত্র স্বপ্নই নয়, সম্ভাবনাও দেখি।”

তিনি বলেন, “কোনো কাজই ছোট নয়, এই কথাটিই আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। কোনো কাজকে ছোট ভেবে সময় নষ্ট না করে তরুণরা কাজে নেমে পড়লে সফলতা আসবেই।”

 

খুরশিদা পারভীন সুমী

ইকবাল হোসেন
ফটো জার্নালিস্ট এসএমই ডিভিশন ,উদ্যোক্তা বার্তা 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here