উদ্যোক্তা রাবেয়া আক্তার শীলা।

প্রতিটি মানুষেরই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্যগুলোকে ঘিরেই আবর্তিত হয় তার জীবন। স্বপ্ন, পরিকল্পনা, অনুপ্রেরণা, সাহসী উদ্যোগ মানুষকে এগিয়ে নেয় তার স্বপ্নের পথে। উদ্যোক্তা হতে চাইলেন কেনো? জানতে চাইলে, অকপটেই কথাগুলো বলছিলেন উদ্যোক্তা রাবেয়া আক্তার শীলা।

তিনি বলেন, “সাত ভাই বোনের মধ্যে আমি ষষ্ঠ। আমার বাবা মেজর এম এ রফিক ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মা গৃহিণী। বাবা-মা, ভাই-বোনদের পাশাপাশি চাচা-চাচি, চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে একই বাড়িতে যৌথ পরিবারের আবহেই বেড়ে উঠেছি আমি। পারিবারিক স্নেহ, যত্ন, শিক্ষা সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো আমার জীবনের সাথে সমান্তরালভাবে। আমি খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে এমএসসি সম্পন্ন করেছি হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। ১৯৯৯ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। পরিবার আমার কাছে স্বর্গ সমতুল্য। স্বামী, সন্তান, সংসারের ভালোবাসায় আমি নিজেকে জড়িয়ে সম্পূর্ণভাবে সংসারী হয়ে উঠি। চাকরিতে আর যাওয়া হয়নি কখনো। ছেলে আর মেয়েকে ঘিরে আমার ছোট্ট পৃথিবী সামনে এগুতে থাকে”।

AWE এর মেলায় এডভোকেট সাহারা খাতুন এর সাথে উদ্যোক্তাগণ

জীবন চলার পথ শতভাগ মসৃণ হয় না কখনোই। প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেই পাড়ি দিতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপ। প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন শীলা, তবে প্রতিটি মূহুর্তেই পাশে পেয়েছেন স্বামীকে। পেয়েছেন বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা।

কলেজে পড়াকালীন সময় নিজের জামা কাপড় নিজেই বানাতেন। নিজের পছন্দমতো ব্লক, বাটিক, সুঁই সুতার কাজ করতেন পোশাকে। হাতের কাজের দীক্ষা পেয়েছেন বড় বোনদের কাছ থেকে।

মেলার স্টলে হাস্যজ্জল উদ্যোক্তা শীলা

কিভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “২০০২ সালে আমেরিকা প্রবাসী ননদ সোনিয়াকে এমব্রয়ডারি করা একটি জামদানি শাড়ি উপহার পাঠিয়েছিলাম। শাড়িটা সোনিয়া ও তার বন্ধুদের খুবই পছন্দ হয়। তারপর থেকে সোনিয়া নিজের সব শাড়ি আমাকে দিয়েই তৈরি করানো শুরু করে। সোনিয়াকে দেখে তার পরিচিতজনরাও আমাকে দিয়ে তাদের শাড়ি তৈরি করায়। বিষয়টি আমার ভালো লাগে। স্বপ্ন দেখি নিজে কিছু করার। ধীরে ধীরে আমার আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে স্বল্প পরিসরে শুরু হয় আমার ব্যবসা। আমার কর্মজীবন।

AWE-এর সকল সদস্যবৃন্দ

এর পরের পথচলা শুধুই এগিয়ে যাবার। নিজে সমৃদ্ধ হয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। বর্তমানে উদ্যোক্তার কারখানায় কর্মরত আছেন ৮ জন কারিগর। জামদানি এবং মসলিন নিয়ে কাজ করেন উদ্যোক্তা। ২০১৬ সালে বন্ধু জলির অনুপ্রেরণায় শুরু করেন নতুন পথচলা। স্টল নেন উত্তরা হোয়াইট হলের মেলায়। নতুন অভিজ্ঞতা হয় সেখানে। সেই থেকেই একেক করে বেশ কয়েকটি মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন । সদা ব্যস্ত থেকেছেন স্বপ্ন পূরণে।

সনদ গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তা

২০১৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী যুক্ত হন AWE (Association of Women Entrepreneurs) এর সাথে। AWE-এর সদস্য হয়ে পেয়েছেন নতুন আঙ্গিক, বেড়েছে ব্যবসার পরিধি। বর্তমানে নিজের একাগ্রতা আর কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান ‘মি এন্ড মাইসেলফ’।

 

সামির হোসেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here