দেখতে লাল টাইওয়ালা একটি শার্ট মনে হলেও এটি হচ্ছে পাটের তৈরি একটি ব্যাগ।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জেডিপিসি (জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার) প্যাভিলিয়নে জুট কটন বা পাটের তৈরি পণ্যে এমনই কিছু আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছেন ইসরাত জাহান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করে টিচার্স ট্রেনিংয়ের উপাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছেন ইসরাত জাহান। পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার কারণে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছেলে সংসার নিয়ে কাটিয়ে দিলেন ১৬ বছর।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর একমাত্র ছেলে আবদুল্লাহ খালিদ ইব্রাহিম এর অনুপ্রেরণায় জুট ফেব্রিক্স বা জুট কটন পণ্য নিয়ে কাজ করার কথা ভাবলেন ইসরাত।
এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে জেডিপিসি থেকে পাটের উপর ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং শেষে ২টি মেশিন কিনে ঘরে বসেই যাত্রা শুরু করলেন। শুরু হলো পাটপণ্য নিয়ে নিরন্তর গবেষণা।
ব্যাক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র পাট গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান “পাটশালা” (Jute Study & Promotion Center-JSPC) তে তিনি নিয়মিত কাজ করছেন।
ইংল্যান্ড থেকে ইসরাত পেলেন প্রথম তিনশ ব্যাগের অর্ডার। আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকেও ব্যাগের অর্ডার পাওয়া শুরু করলেন। শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ এ মেয়ে সামিন ফারাবির মাধ্যমে ফেয়ারওয়েল গিফট হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগ উপহার দিয়ে শিক্ষকদের কাছে থেকে অনেক প্রসংশা পেয়েছেন ইসরাত জাহান।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় জেডিপিসি’র প্যাভিলিয়নে মোট ২৬টি স্টলের মধ্যে ২৫ নং স্টলে ‘কেটুকে ওয়্যার্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান।
স্টলে রয়েছে ছোট-বড় হ্যান্ড পার্স, চুড়ি, টিস্যু বক্স কভার, লাঞ্চ বক্স কভার, পাটের ঝুড়ি, ফ্লোর ম্যাট ইত্যাদি থেকে শুরু করে ৪২ রকমের পণ্য। শুধুমাত্র তাই নয় জুট কটন ব্যবহার করে তৈরি করেছেন ব্লেজার, কোটি, পাঞ্জাবী।
বাণিজ্য মেলার ১৯তম দিনে ক্রেতাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউবিপ্রেস কে উদ্যোক্তা জানান, মেলায় আগত ক্রেতারা তার স্টলে আসছেন এবং তার পণ্যগুলো পছন্দ করছেন, কিনছেন।
তিনি আরও জানান, তার স্টলের আকর্ষনীয় কলারটাই ডিজাইনের ব্যাগ দেখে মেলায় আগত বিদেশী ক্রেতাদের মাধ্যমে দুইটি দেশ থেকে ব্যাগটির অর্ডার পেয়েছেন, যার কাজও চলছে কারখানায়। এছাড়াও মেলায় অন্যসকল পণ্যে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
মাত্র ৬ জন কর্মী ও ২ টি মেশিন নিয়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করে, প্রচন্ড ইচ্ছেশক্তি এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে অল্পকিছু দিনেই হয়ে উঠেছেন একজন উদ্যোক্তা।
খুরশিদা পারভীন সুমী