গত ৩সপ্তাহ ধরে ৩০জন ভলান্টিয়ার আছেন পল্লবীতে বিদ্যানন্দের অফিসে। যাপন করছেন কঠিনতম জীবন। করোনার কঠিন সময়ে পরিবার পরিজনদের ছেড়ে হোম কোয়ারেন্টাইনকে অফিস কোয়ারেন্টাইন মেনে নেমেছেন মানবতার সেবায়। বিছানা নেই, বালিশ নেই। আছে কিছু ব্যাগ আর বই পত্র, টেবিল চেয়ার। এসবকেই বিছানা বালিশ মনে করে কাজের ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেন তারা। পেশায় কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, স্কুল ছাত্র বা চাকুরিজীবী। তবে এখন তাদের পরিচয় তারা দেশের সেবায় নিয়োজিত বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক।

করোনা নিয়ে গত এক মাস ধরে কাজ মাস্ক বানিয়ে বিতরণ, পাবলিক প্লেসে জীবানুনাশক ছিটানোর কাজ, হাসপাতালে জনসচেতনতা তৈরী, খানার বিতরন নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে বিদ্যানন্দ। হাত ধোয়া বেসিন বসানোর কার্যক্রম চলেছে। ২০টি পোর্টেবল বেসিন বসানো হয়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

আওয়ারনেস ক্যাম্পেইন, মডেল ক্যাম্পেইন, যাই বলা হোক না কেন এখনো যেন কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা বিদ্যানন্দ। তাদের চাওয়া তাদের কাজগুলোকে মডেল ধরে অন্যরাও যেন যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতন হোক, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। তবেই এই দূর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব।

বিদ্যানন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে দেখিয়েছে কী করে পোর্টেবল হাত ধোয়া বেসিন, বানানো যায়। বাজার থেকে একটা পানির ড্রাম কিনে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পোর্টেবল বেসিন বসাচ্ছেন। রেড ক্রিসেন্টও কাজ করেছে বিদ্যানন্দের সাথে। যৌথভাবে কাজের পর প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এখন তারা ছড়িয়ে গেছেন সারাদেশে। কাজ করছেন শহর বন্দরে।

পাবলিক ট্রান্সপোর্টে জীবানুনাশক ছিটানোর কাজ এখন নিয়মিত চলছে। টাকা ও চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত এলাকায় প্রতিদিন দুইটি ট্রাকে ৬০০০লিটার, ৩০০০লিটার করে জীবানুনাশক ছিটানোর কজ করছে বিদ্যানন্দ। বিদ্যানন্দের প্রধান কিশোর কুমার দাস, বর্তমানে পেরুতে অবস্থান করছেন। দেশ থেকে তার নির্দেশনা মেনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একদল বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ।

২০১৩সাল থেকে কাজ করছে বিদ্যানন্দ। এক টাকায় আহার নামক কর্মসূচি হাসি ফুটিয়েছে হাজারো সাধারন মানুষের মুখে। বর্তমানে বন্ধ আছে এক টাকায় আহারের কাজ। তবে সেই উইং থেকে প্রতিদিন বিতরন করা হচ্ছে ৫০০০ মানুষের খাবার। পুলিশ, প্রশাসন, স্কাউট, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে সেই খাবার পৌছে যাচ্ছে বিভিন্ন পশ্চাৎপদ এলাকায়। চাল, ডাল, তেল, সাবানও বিতরন করছেন তারা। অনেক সময় এই খাবারগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছানোর জন্য পরিবহন সংকটে পরতে হয়েছে। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। কেউ হয়তো তো অনেক টাকা ডোনেট করেননি বা করতে পারেননি। কিন্তু এই ত্রানগুলো পৌছে দিতে দুদিনের জন্য দান করেছেন নিজের শখের গাড়িখানা। সেই গাড়িতে চেপে বিদ্যানন্দের ত্রান পৌছে গেছে শহর ছাড়িয়ে গ্রামের মেঠোপথে।

মাস্কের সংকটের সময় ১০০০০হাজার মাস্ক, ৫০০লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করেছে বিদ্যানন্দ। যার মধ্যে ২১০লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিজেরা কিনেই বিতরন করেছেন মসজিদ, মন্দির ও নানান পাবলিক প্লেসে। এখন পর্যন্ত ডাক্তারদের সুরক্ষায় পিপিই দেওয়া হয়েছে দেড় হাজার। বিদ্যানন্দের ইচ্ছে আছে স্টান্ডার্ড উপায়ে মোট ৫হাজার পিপিই সরবরাহ করার। রাস্তার পাশে অভুক্ত প্রাণীদেরকেও খাবার সরবরাহ করছেন তারা। অনেক সময় নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তার পাশে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে পরে থাকা মানুষকেও বুকে টেনেছেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক।

সাধারন মানুষজন, কর্পোরেট থেকে শুরু করে সকলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের সহযোগিতাই এই সেবার অর্থায়নের মূল উৎস। কেউ বিনামূল্যে প্রোডাক্ট দিচ্ছেন, গাড়ি দিচ্ছেন, খাবার কেনার টাকা দিচ্ছেন এতেই চলছে বিদ্যানন্দের কাজ। বিকাশ ও রকেট তাদের সার্ভিস চার্জ মওকুফ করেছে এবং নিজেরাও ফান্ড বৃদ্ধির জন্য নিয়েছে উদ্যোগ। বিদ্যানন্দের মূল একাউন্টটিকে বিকাশের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে বিকাশ অথরিটি। যেখানে সামাজিকি যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারনা কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সাধ্যমত ডোনেট করছে। কেউ ১০টাকা কেউ বা ১০হাজার। অবিশ্বাস্যভাবে তারা যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করছে বলেই শহর থেকে তৃণমূলে যেতে পারছে বিদ্যানন্দ।
সাদিয়া সূচনা