নীলফামারীর শ্রেষ্ঠ জয়িতা রাজিয়া সুলতানা

0
উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার সিঙ্গেরগাড়ি গ্রামের মরহুম কলিম উদ্দিনের ছোট মেয়ে রাজিয়া সুলতানা। পাটপণ্য নিয়ে ১২ জন কর্মীকে সাথে করে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে জেলা এবং উপজেলা পর্যায় মিলেছে কাজের স্বীকৃতি।

রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ইচ্ছে ছিল চাকরি করবেন। কিন্তু স্বামীর ইচ্ছে না থাকায় চাকরি করা হয়নি রাজিয়ার। আবার পড়াশোনা শেষে বসে থাকতেও ভালো লাগছিল না তার। তাই নিজে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন।

২০১৪ সালে বাসাতেই ব্লেজার, হুডি তৈরি করা শুরু করেন এবং ভালই সেল হয়৷ কিন্তু কেন যেন ভালো লাগছিল না রাজিয়ার। পরে বাদ দিলেন কাজটি।
মাঝে অনেকটা সময় পেরিয়ে করোনাকালে সামাজিক পাতায় একটি গ্রুপের সাথে যুক্ত হন। সেই গ্রুপটিতেই তিনি সবার কাজ, ব্যবসার ধরন দেখে আবার নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেন।

আস্তে আস্তে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন রাজিয়া। বরফি ঘর নামে একটি পেজ খুলে কটকটি দিয়ে শুরু করলেন। সেখানেও বেশ ভালো সাড়া পান। কিন্তু একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাসার সবাই খুব রাগ করে।

তারপর তিনি পাটের শোপিস বানাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। পুঁজি বলতে ছিল বাচ্চাদের ও তার জমানো ৫ হাজার টাকা। পাটের শিকা বানালেন। অনেকেই পছন্দ করতে লাগলো তার শিকা। আস্তে আস্তে অর্ডার পেতে শুরু করলেন। এভাবে শুরু হয় তার উদ্যোগের নতুন যাত্রা।

সৌখিন সুন্দর সুন্দর পণ্য তৈরির অঙ্গীকার নিয়ে তিনি তার উদ্যোগের নাম দিলেন Nandonik Craft। রাজিয়ার এই অনলাইন প্লাটফর্মে রয়েছে শিকা, শোপিস, দোলনা, প্যাকেজিং ব্যাগ, পর্দা, লেডিস ব্যাগ, মোবাইল ব্যাগ, ঝাড়বাতি, স্লিপার ওয়াল হ্যাঙ্গিং মিররসহ অনেক পাট পণ্য। প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকার পণ্য সেল হয় তার।

রাজিয়ার কারখানায় প্রায় ১২ জন নারী কর্মী রয়েছেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাটসহ অনেক জেলায় রাজিয়ার পণ্য যাচ্ছে। এছাড়াও কানাডা, কাতার, স্পেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবে পণ্য পাঠিয়েছেন।

তিনি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে Women and E-Commerce Trust (We) থেকে জয়ী এওয়ার্ড পেয়েছেন।

বেগম রোকেয়া দিবসে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমে এবার নীলফামারী থেকে ‘অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার অর্জন করেছেন রাজিয়া সুলতানা।

উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘রাতের পর রাত জেগে কাজ করেছি। আমি এখন তার ফল পাচ্ছি। লোকে এখন আমায় চেনে। আমার কোম্পানির নাম জানে। যারা এক সময় নাক সিঁটকেছে তারাও প্রশংসা করেন। খুব ভালো লাগে। আমি চাই আমার কারখানায় তৈরি হবে পাটের বিভিন্ন পণ্য। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আরও রপ্তানি করতে চাই। সাধারন মেয়েদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই যেন তারা নিজেরা উপার্জন করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তরুণদের বলতে চাই শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে, চাকরি দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবেই দেশ আরো এগিয়ে যাবে।’

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here