একটি ব্লক পোষাক থেকে ডিজিটাল বিজনেস আইডি

0
উদ্যোক্তা সালমা রহমান আঁখি

উদ্যোক্তা সালমা রহমান আঁখি ১৯৯৭ সালে একটিমাত্র ব্লকের পোষাক বিক্রির মাধ্যমে শুরু করেন ‘আঁখি’স কালেকশানস’। এরপর নিজের চেষ্টায় শোরুম দেন তিনি। সেই থেকে শুরু করে দেশীয় পণ্য নিয়ে আজও কাজ করছেন তিনি।

যে কোন কাজ শুরুর প্রথম দিকে সবাই কম বেশী বাধার সম্মুখীন হয়। আমাদের সমাজে মেয়েরা হয়তো আরও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন উদ্যোগের শুরুতে। কাজ করতে মাঝেমাঝে অনেক রাত হয়ে যায়, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রন করা, মহিলা মালিকের তত্বাবধায়নে কাজ করার ব্যাপারে অনেকের বিরূপ ধারনা শুরুর দিকে সৃষ্টি হলেও উদ্যোক্তার মনোবলের কাছে এই বাধা আর টেকেনি। অনলাইন হবার পর ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করা তখন একটা যুদ্ধের মত ছিল। প্রথম দিকে কেউ অনলাইনে আস্থা পেত না। আসতে আসতে ভালো পণ্য সময়মত ডেলিভারি এবং ভাল ব্যবহার দিয়ে আঁখি’স কালেকশানস সবার বিশ্বাস অর্জনে সফল হয়। এরকম নানান রকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে উদ্যোক্তা আঁখিকে কিন্তু সেসব কাটিয়ে উঠেছেন সক্ষমতা আর আত্নবিশ্বাস দিয়ে।

তার উদ্যোগের সফলতার একটি বৃহৎ অংশ হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিজিটাল বিজনেস আইডি এক্টিভেশন। এই ব্যাপারে তার অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। কে না চায় তার প্রতিষ্ঠানের উপর সবার ভরসা থাকুক! সবাই যাতে চোখ বন্ধ করে অর্ডার করতে পারে যে কোন প্রোডাক্টের জন্য। সর্বপরি সরকারি ভাবে এনলিস্টেড থাকা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই মর্যাদাপূর্ণ। তাছাড়া ডিজিটাল আইডি এক্টিভেশন লঞ্চিংয়ে প্রথম এগারো জনের মধ্যে আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান জায়গা করতে পেরে গর্বিত। মাননীয় বানিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি, সালমান এফ রহমান এবং মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে সনদ পাওয়ায় ভীষনভাবে সম্মানিতবোধ করছি।

এই ডিজিটাল আইডি এক্টিভেশন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন প্রতারণা বন্ধের জন্যই যাত্রা শুরু হয়েছে ইউনিক বিজনেস আইডি (UBID) তবে আলোচনা চলাকালীনই নাম পরির্বতন হয়েছে (DBID) ডিজিটাল বিজনেস আইডি। অনলাইন ব্যবসা করতে হলে সবাইকেই ডিবিআইডি থাকতে হবে। ডিজিটালি ব্যবসা করার জন্য সমস্ত ডকুমেন্টস যাদের ঠিক থাকবে তারাই কেবল এর আওতাধীন হতে পারবেন। মাইগভ নামে একটি এপসের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠান আঁখিস কালেকশানস আবেদন করেছি। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আমার প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ডকুমেন্টস ঠিক আছে বলেই আমাকে সার্টিফিকেট দিয়েছে।’

এই ডিজিটাল বিজনেস আইডির সুফল সম্পর্কে আমরা জানতে চায় উদ্যোক্তার কাছে। তিনি এই ব্যাপারে উদ্যোক্তা বার্তা কে জানান, ‘এটির আওতায় ধীরে ধীরে সকল উদ্যোক্তাদের যুক্ত করা হবে যাতে করে ক্রেতা এবং বিক্রেতার সকল রকম সমস্যার সমাধান করতে পারে। কেউই যেন আর অনাকাঙ্খিত সমস্যার মুখোমুখি না হয়। আমার উদ্যোগে এটি বিশাল ভুমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারন সরকারি ভাবে যখন আমার প্রতিষ্ঠান এনলিস্টেড থাকবে তখন ক্রেতাদের স্বাভাবিকভাবেই একটু হলেও আস্থা থাকবে। সুতরাং আমি খুবই আশাবাদী।’

তার উদ্যোগকে সঙ্গী করে তিনি বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন যেগুলো তার পথচলার অনুপ্রেরনা। তার মাঝে উল্লেখ্য হলো: ১. উই কালারফুল ফেস্ট(প্রটেক্ট হোয়াট ইউ ক্রিয়েট এওয়ার্ড)। ২. দ্য পাওয়ার অব উইমেন এওয়ার্ড। ৩. সফল উদ্যোক্তা সম্মাননা পদক, বাংলাদেশ হস্তশিল্প অ্যাসোসিয়েশন। ৪.পাওয়ার অব লিডারশিপ এওয়ার্ড, বাংলাদেশ হস্তশিল্প অ্যাসোসিয়েশান। ৫. ইউনিটি ফর ইয়াং জার্নালিস্ট। ৬. মহান বিজয় দিবস সম্মাননা ২০২০ সহ বেষ্ট ডিজাইনার হিসেবে আরো কিছু পদক লাভ করেছেন যা উদ্যোক্তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আঁখি’স কালেকশানের বিশেষ দিক হচ্ছে কাপলসেট। যেটি অনলাইন জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে যা সবার জন্য অনুকরণীয়। দেশিয় কাঁচামাল নিয়ে কাজ করেন তিনি। দেশিয় তাঁত, জামদানী, মসলিন, খাদী এসব দিয়ে তৈরী পোশাক এবং হাতে তৈরী গহনা দেশ থেকে দেশের বাইরেও পাঠিয়ে থাকে আঁখি’স কালেকশানস। এক বৈশাখে সাতরঙা একটি শাড়ীর রের্কড পরিমান সেলের রের্কড আছে তার প্রতিষ্ঠানের। সবাইকে পাশে নিয়েই বহুদুর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি যার মাধ্যমে সবাই একসাথে দেশ গড়ার হাতিয়ার হবে।

সাকিব মাহমুদ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here