শিক্ষক পরিবারে তার বেড়ে উঠা। তার বাবা আবদুল বারিক সরদার ইংরেজি সাহিত্যের প্রফেসর ছিলেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মা রওশন আরা, যিনি উদ্যোক্তার সকল কাজের অনুপ্রেরণা। পরিবারের একমাত্র সন্তান তিনি। বড় হয়েছেন সিলেটে। ঢাকায় নিজ বাড়িতে এখন তার বসবাস।
স্কুল জীবন সিলেট সরকারী অগ্রগামী গার্লস স্কুলে এরপর এম.সি কলেজে এইচএসসি শেষ করেন।বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হওয়ার সত্ত্বেও বাবার ইচ্ছেতে ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করেন। কিন্তু অনার্সের পাশাপাশি সাইন্স এর প্রতি প্রবল আকর্ষনের জন্য প্রথমে গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়া এবং পরে কম্পিউটার কোডিং এর উপর মোট চার বছর প্রাইভেট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুটো ডিপ্লোমা করেন। এবং তার সাথে সাথেই স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ শেষ করেন নিশাত মাসফিকা।
জীবনে শুরু থেকে গদবাঁধা চাকরি জীবন পছন্দ নয়, তার জন্য কখনো চাকরি করা হয় নি। শুরু থেকেই নিজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। উদ্যোক্তা হবেন এমনটা কখনো ভাবেন নি। তবে ছোটবেলা থেকে তার ভাবনা ছিল, মানুষ তার কর্মের মাঝেই বেঁচে থাকে। এই ভাবনাটা এতো প্রবল ছিলো যে সবসময় ভাবতেন এমন কিছু করতে হবে যা তার সাথে আরো কয়েকজন মানুষের উপকার হয়। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে জীবনে অনেক কিছুই করেছেন, নিজের সাধ্যমতো। তবে তার কাজে সবসময় আমাদের দেশকে তুলে আনতে চেষ্টা করতেন। পড়াশুনার ফাঁকে যখন কোডিং নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন নেহাত শখের বসে নিজে ডেভলপ করে সোনালি সকাল নামে একটি অনলাইন পত্রিকা শুরু করেন। সেটা ২০০৭ সালের কথা। তিনি একাই সব কাজ করতেন। পরে জানতে পারেন সেটা সেসময় অ্যালেক্সা রেংকিং এর নাম্বার তিন পজিশনে চলে আসে। এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নারী সম্পাদকের স্বীকৃতি পেয়ে যান।
এরপর আইসিটি জগতে তার প্রফেশন শুরু হয়। তার নিজের কোম্পানি রেইনড্রপস টেক লিমিটেড যখন শুরু হয়, তখন ভাবনা হলো গতানুগাতিক আইটি কোম্পানির কাজগুলোর পাশাপাশি নতুন কি করা যায়। যেহেতু ছোটবেলা থেকে অনেক কিছুই করতে চেষ্টা করতেন। কারুশিল্প নিয়ে তার আগ্রহ পারিবারিকভাবেই। সেই থেকেই ভাবনা এলো কারুশিল্প, কারুশিল্পী এবং প্রযুক্তির কিভাবে সমন্বয় করবেন। দেশজ ক্রাফটস হলো তার সেই উদ্যোগ, যেখানে তিনি চেষ্টা করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও কারুশিল্পীকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সমন্বয় করতে। দেশজ ক্রাফটস এর গবেষণা কয়েক বছর ধরেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর। তারা চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাবলম্বী করা। এবং অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজস্ব ই-কমার্স যাত্রা শুরু করে। যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য নিজ ব্র্যান্ড পরিচয়ে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে পারে। পরিচিত করতে পারে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা দেশীয় উদ্যোক্তাদের পণ্য আরো ব্যাপকভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যগুলো ও সংস্কৃতিগুলো রক্ষা করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করাই উদ্যোক্তার স্বপ্ন।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন “পরামর্শ ঠিক না, বলতে পারেন উদ্যোক্তা জীবনে এই কথাগুলো বাস্তবতা। যা মানতেই হয়। জীবনে অনেক চড়াই উতরাই আসে। পথ কখনো মসৃণ হয় না। একদল লোক থাকবেই আপনাকে কিভাবে টেনে পিছনে ফেলে দেয়া যায়, জীবনের সেই সমস্যাগুলো সবসময় ফেইস করি, কিন্তু সবসময় মনে সাহস থাকতে হবে, বিশ্বাস থাকতে হবে যে আমি যা করছি- সঠিক পথেই করছি, কারো কথায় বা আচরণে আমি বিভ্রান্ত হবো না। নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবো না। আমাকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবেই। সেই আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।”
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা