উদ্যোক্তা শব্দটির মাঝেই লুকিয়ে আছে চ্যালেঞ্জ। নতুন কিছুর আহ্বান। নতুন কিছু সৃষ্টির টান সর্বদা একজন উদ্যোক্তাকে তাড়া করে ফেরে। সৃষ্টির সুখে উদ্যোক্তা যেমন তৃপ্ত হয়, তেমনি সৃষ্টির তাড়নায় তাকে পোহাতে হয় সীমাহীন কষ্ট ।
একজন উদ্যোক্তার কর্মজীবনের কোনো বাঁধা ধরা সময় থাকেনা, আবার জানার পরিধিও হতে হয় সর্বমূখি। একদিকে যেমন নিজের কর্মীগণকে সাথে নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তেমনি অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যপারেও থাকতে হয় সতর্ক ।
যারা উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেদের দেখতে চান তাদের জন্য রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জঃ
০১। নিজের সাথে বোঝাপড়া। আসলেই কি আমি উদ্যোক্তা হতে চাই ? আমি কি উদ্যোক্তার জীবনের সবকয়টা বাধাবিপত্তি নিতে প্রস্তুত?
একপর্যায়ে পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে কিছুটা পাশে সরিয়ে কর্মজীবনে মনোনিবেশ করতে হয়, তার জন্য কি আমি প্রস্তুত ? আর্থিক সংকট মোকাবেলা করার মতো সাহস কি আমার আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুবই জরুরী। শুধুমাত্র মোহে পড়ে উদ্যোক্তা
হওয়া যায় না। এর জন্য যে কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তার জন্য আপনি নিজে প্রস্তুত কিনা তা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
০২। নিজের ভালোলাগার ক্ষেত্র খুঁজে বের করুন । যে কাজ করে আনন্দ পাবেন, সে কাজটি করলে দিনশেষে তৃপ্ত হতে পারবেন। সে ধরনের একটি ক্ষেত্রে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে ঢেলে দিন। পছন্দের ক্ষেত্রটি যদি আপাতদৃষ্টিতে খুব লাভজনক নাও হয়, তবে ধৈর্য ধরুন। চেষ্টা করুন, নতুন পথ তৈরি করুন।
অন্যদের অনুকরণ না করে নিজের মতন করে উপস্থাপন করা শুরু করুন। সাফল্য আসবেই।
০৩। ধৈর্য ধারন করাটা অত্যন্ত জরুরী। । কোনোকিছু শুরু করতে গেলে প্রথমে ভুল হবেই। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আবার উঠে দাঁড়ানোর মত মানষিক শক্তিও থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সফল ব্যাক্তিদের জীবনী উৎসাহ হিসেবে কাজ করতে পারে।
০৪। ব্যাবস্থাপনা ও আর্থিক বিষয়ক পরিকল্পনা। উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে কর্ম পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ও উৎস নিশ্চয়তা। ইদানীং একটা ভ্রান্ত ধারনা অনেকের মধ্যেই কাজ করে যে, শুধু ভাল একটি পরিকল্পনা হলেই বড় ব্যবসায়ী হওয়া যায়। কিন্তু পরিকল্পনার সাথে সাথে কঠোর পরিস্রম, প্রতিনিয়ত লেগে থাকার মনোভাব, অর্থ
নিশ্চয়তা আর দূরদর্শিতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব কিছুর সমন্বয়ই একজন উদ্যোক্তাকে সফলতা এনে দিতে পারে।
০৫। নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। উদ্যোক্তার চোখ কান সকল পরিস্থিতিতেই খোলা রাখা দরকার। উদ্যোক্তাদের শিখাতে হয় প্রতিনিয়ত। বাস্তব জীব
নের কঠিন সংগ্রাম যদিও উদ্যোক্তাদের ভাণ্ডারকে করে দেয় পূর্ণ। তাত্ত্বিক বিষয়য়েরও চাই সমান দখল। তাই পড়তে হবে, তেমনি জানতে হবে।
সুযোগ থাকলে পরীক্ষিত ২/৩ জনকে মেন্টর হিসেবে নেয়া যেতে পারে। সর্বশেষে বন্ধুমহল নির্বাচন। বন্ধুবান্ধব সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তাই বন্ধু নির্বাচনে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্যোক্তা মানে গতানুগতিক জীবনধারার বাইরে এসে সর্বদা চ্যালেঞ্জ গ্রহনের এক অন্যরকম জীবনযাত্রা। প্রতিনিয়ত বাধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে সংগ্রাম করার মানসিকতা ও সাহস থাকলেই এই পথ পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন দেখুন।
কানিজ ফাতিমা
তরুণ পর্যটন উদ্যোক্তা