ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক আগ্রহ ছিলো। শুরুটা প্রচন্ড ভালোলাগা থেকে, একদম শূন্য থেকে। প্রচন্ড ডেডিকেশন, হার্ডওয়ার্ক আর প্যাশনই আমার শুরুর দিকের মূলধন।
তারপর একটু একটু করে আগানো, একটু একটু করে সুযোগ তৈরী হওয়া। শুরুতে সবার কাছে নিজেকে প্রমাণ করাটাও ছিলো কঠিন কাজ। আমি ভালো পারি বা আমি এই বিষয়ে দক্ষ মুখে বললেই হয় না। সবাই চায় অভিজ্ঞতার প্রমাণ।
আমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অনলাইন ক্লথিং পেইজের মাধ্যমে ফ্যাশন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়। ক্লাস ও পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতাম।ধীরে ধীরে কাজের চাহিদা বাড়তে থাকে। অনলাইন পেইজে ব্যাপক সাড়া পাই। তখন আমার সাথে হাতের কাজ, এম্ব্রয়ডারি করার জন্য লোক নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। তারপর হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্যেও প্রয়োজন হয় ডেলিভারি ম্যান। সে সময়ের কষ্ট ও ডেডিকেশন অনেকটা বর্ননাতীত।
পরিবার চাইতো আর দশজনের মতো পড়াশোনা শেষ করে আমিও চাকরি করবো। আমার কাজকে অযথা বাড়তি ঝামেলা মনে করতো সবাই। তাই একই সাথে পরিবারকে খুশি করে আবার নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ইনভেস্টমেন্ট আর নতুন নতুন ডিজাইন করাটা রীতিমতো যুদ্ধের মতো ছিলো।
ফ্যাশন সেকশনে কাজ করতে করতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রতি দুর্বলতা থেকে বিষয়টাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি এবং প্ল্যান করি ওয়েডিং প্ল্যান নিয়ে কাজ শুরু করবো।
আমি ইতোমধ্যে দেশের বড়বড় সব ভেন্যুতে বিয়ের ইভেন্ট ডেকর ও অন্যান্য সার্ভিস দিয়েছি। আর ক্যাসুয়াল ওয়ারের পাশাপাশি চলছে ব্রাইডাল ওয়ারের কাজ। এক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, আমি দেশীয় কাপড় এবং কারিগর দিয়ে পোশাক তৈরী করি। যেসব ড্রেস ইতমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
দেশের বাইরে থেকে পোশাক না এনে অনেকে আমার কাছ থেকে কিনছে। ব্রাইডাল পোশাকে কারুকাজ, এম্ব্রয়ডারি টেইলরিং করার জন্য আমার সাথে কাজ করছে একটি দক্ষ টিম। কারিগরের সংখ্যা ১২ জন। তবে জরুরী প্রয়োজন বা কাজের চাপ বেড়ে গেলে আমি দৈনিক মজুরি প্রদান করে কারিগর নিয়ে থাকি। আমার উদ্যোগের পেছনে আমার ভাবনায় ছিলো, আমার সাথে আরও বেশকিছু মানুষ স্বাবলম্বী হোক, দক্ষ হয়ে গড়ে উঠুক। তারাও নিজের পায়ে দাঁড়াবে। স্বচ্ছলতা আসবে তাদের জীবনে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমার সাথে কাজ করছে একদল দক্ষ কারিগর। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে আমাদের দরকার হয় ফুলের কারিগর, ইলেকট্রিশিয়ান, গ্রাফিক্স
ডিজাইনার এবং মার্কেটিং এক্সপার্ট।
ওয়েডিং ইভেন্ট প্ল্যানিং এ শুরু থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছি। সেখান থেকেই ধীরেধীরে এটির আরো প্রসারের পরিকল্পনা চলছে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি আরও ভালো
করার পাশাপাশি আরও লোকবল নিয়োজিত করে কাজের প্রসার ঘটানোর।
প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিছু সফল হয় আর কিছু থেকে অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা। বিফলতা এসেছে অনেক। কিন্তু হাল ছাড়িনি। কিছুদিনের বিরতি দিয়ে নতুন উদ্যমে।
আবার শুরু করি। আর বাধা তো আসবেই।
সমাজ, পরিবেশ, ক্রেতার মনোভাব আর ইনভেস্টমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে অনেক সময় সবই একেকটা পাহাড়ের মতো হনে হয়, কিন্তু আমাদের তা অতিক্রম করতেই হবে।
সাফিয়া সাথী
তরুণ উদ্যোক্তা, ওয়েডিং ইভেন্ট প্ল্যানার