একটি দেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য গুনাগুন, পানি, মাটি-সহ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যকে ঘিরে নানা বৈচিত্র্যময় পণ্য ও ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে সৃষ্টি হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে এসব পণ্য মানুষের মন-মানসিকতায় ভূমিকা রাখছে। আমাদের সারাদেশেই ছড়িয়ে আছে এমন নাম জানা-অজানা অনেক লোকপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এইসব যুগ -যুগান্তরের ঐতিহ্যবাহী পণ্য কোনো একজনের নিজস্ব সম্পদ নয়। আবার একক কোম্পানির মালিকানায়ও নেই। যার ফলে বর্তমান সময়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী নানা সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/06/পেঁয়াজ-চাষ-করে-আলোর-মুখ-দেখছেন-গোলাম-মোস্তফা-2021-06-17T152314.589-1024x576.png)
২০১৩ সালে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষার জন্য আইন করা হয়। আইন অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সুরক্ষা দিচ্ছে জিআই নিবন্ধন। জিআই সনদ পাওয়া ঐতিহ্যবাহী পণ্য স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে জিআই পণ্য দেশের বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/06/পেঁয়াজ-চাষ-করে-আলোর-মুখ-দেখছেন-গোলাম-মোস্তফা-2021-06-17T150830.753-1024x576.png)
এরই ধারাবাহিকতায় আজকে বিসিক কারুপণ্য ‘শতরঞ্জি শিল্প’কে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর কর্তৃক ‘ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য’ ( GI পণ্য) হিসেবে নিবন্ধন সনদ প্রদান করেছে। মাননীয় শিল্প মন্ত্রী জনাব নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, এমপি ও মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কামাল আহমেদ মজুমদার, এমপি-এর কাছ থেকে শতরঞ্জি শিল্পের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধন সনদ গ্রহন করেন বিসিক চেয়ারম্যান জনাব মো: মোশতাক হাসান এনডিসি।
ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (সংক্ষেপে জিআই) হচ্ছে মেধাসম্পদের অন্যতম শাখা। কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং ওই দেশের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির যদি কোনো একটি অনন্য গুণ-মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই দেশের জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একই গুণ-মানসম্পন্ন সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও সাধারণত উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধিশালী হলেও দীর্ঘ সময় ধরে জিআই আইন না থাকায় এ দেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের মালিকানা সুরক্ষার সুযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এবং ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। এরপরই দেশের ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য নিবন্ধনের পথ সুগম হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) দেশের প্রথম ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে জামদানিকে জিআই নিবন্ধন দিয়েছে। এরপর ২০১৭ সালে ইলিশ ও ২০১৯ সালে ক্ষীরশাপাতি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এবার পেলো শতরঞ্জি।
জিআই স্বত্ব লাভের মাধ্যমে অফুরন্ত সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন নতুন দুয়ার খুলতে শুরু করবে। অর্থনৈতিক এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে। জিআই সনদ পাওয়ার পাশাপাশি এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি উপযোগী করে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা