ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময় গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছোট ছোট দোকান দিয়ে বসতে দেখতেন দোকানীদের। তখন তার খুব শখ হতো দোকানদার হবার। একবার এক অনুষ্ঠানে আত্মীয়রা অনেক ফল নিয়ে আসেন পার্থদের বাড়িতে। সেখান থেকে ৩০/৪০ টি আপেল স্লাইস করে পার্থ সেই অনুষ্ঠানে একটি দোকান দিয়ে বিক্রি করেন এবং সব গুলো আপেল বিক্রি হয়ে যায়। ছোটবেলার সেই অনুপ্রেরণাই তাকে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখায়। সম্ভবত সে কারণেই কখনো চাকরিকে পেশা হিসেবে ভাবেননি পার্থ।
তার পুরো নাম নিতাই সরকার পার্থ। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে মেজর এন্ড মার্কেটিং এ বিবিএ, এমবিএ কমপ্লিট করেছেন পার্থ। পড়াশোনা শেষ করে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিন বছর সেখানে চাকরি করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বেসিক লার্নিংগুলো সেখান থেকেই শিখে নিয়েছেন পার্থ। তার উদ্দেশ্য ছিলো চাকরি করা নয় বরং চাকরি থেকে কৌশল রপ্ত করা। তিনি নিজে ব্যবসা করবেন। হবেন একজন উদ্যোক্তা। নিজের কাজ দিয়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবেন এমনটায় ভাবতেন পার্থ।
কিন্তু পরিবারের সবাই চাইতেন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবে। তাই চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হবার কথা পরিবারের কাছে লুকিয়েছেন ঠিকি কিন্তু মাকে বলেছিলেন চাকরি আর করবে না। ব্যবসা করবে। ৬ মাস পর বাবা জানতে পারে ছেলে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করছে। পার্থর মা তার বাবাকে বুঝিয়ে বললে বাবাও সম্মতি দেন ব্যবসায়।
প্রিয় মানুষটির জন্য সেই সময়ের বাটিকের পপুলার একটি ড্রেস কিনতে গিয়ে এক আপুর সাথে পরিচয় হয় পার্থর। ড্রেস বিক্রেতা সেই আপুকে পার্থ বলেন তার ড্রেসগুলো যদি সে সেল করে দেয় তাহলে তাকে কত টাকা লাভ দিতে পারবেন। লাভ কম হলেও পার্থ রাজি হন ব্যবসা করতে, শুরুটা ছিলো এভাবেই।
নতুন উদ্যোমে যাত্রা শুরু হলো পার্থর। অনেক আগেই অনলাইনে ‘অর্থা’ নামে একটা পেইজ খোলা ছিলো পার্থর। সেই পেইজে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। ভালো সাড়াও পেতে শুরু করেন। কিন্তু পার্থকে অনুপ্রেরণা দেয়া কয়েকজন ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট পণ্য নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। তাই পার্থ পণ্য হিসেবে বেছে নিলেন হোম ডেকরের পণ্যগুলো। যেমন- কুশন, বেডসেট, মশারি, পর্দা, পিলো, কুশন কাভার, পিলো কাভার এবং সব গুলো আনকমন ডিজাইনে ম্যাচিং করে বানাতে শুরু করেন। ধীরেধীরে অর্থার পণ্যগুলো ক্রেতাদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠে, ক্রেতা চাহিদাও বাড়ে বেশ।
ব্যবসা বাড়তে থাকলো। অনলাইনের পাশাপাশি মিরপুরে একটি শো-রুম দিলেন পার্থ। পার্থ বলেন, বাটিক মানেই বাংলাদেশ। তাই কুমিল্লার ঐতিহ্য বাটিক এবং খাদি নিয়ে কাজ করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান পার্থ। অর্থা হবে মানুষের আস্থা, অর্থা হবে বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ড। ক্রেতা চাহিদার কথা ভেবে উদ্যোক্তা পার্থ বলেন, ভবিষ্যতে তিনি ৭টি বিভাগে অর্থার শো-রুম দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বর্তমানে ৮ জন কর্মী নিয়ে পার্থ তার অনলাইন এবং শো-রুমের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জমকালো ভাবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা