উদ্যোক্তা- লাবু মিয়া ও তার সহধর্মিনী

ছোট বেলায় হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা গল্পটি পড়েননি বা পড়ে কৌতুহলী হননি এমন মানুষ বোধহয় খুব কম। বইয়ের পাতায় সেই গল্প আর ছবি দেখে নিশ্চয় আপনিও ভেবেছেন? কল্পনায় এঁকেছেন সেই একঝাঁক কিশোরের মুখ কিভাবে তারা রহস্যময় সেই বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরের মূর্ছনায় অদৃশ্য হয়েগেলো পাহাড়ের আড়ালে!

হ্যাঁ, আপনি যদি ঢাকার বাঁশিওয়ালা লাবু মিয়াকে দেখেন আপনার মনের দৃশ্যপটেও ভেসে উঠবে জার্মানির হ্যামিলনের সেই বংশীবাদককে। চওড়া কপাল, মাথায় সাদা ও মেহেদী রাঙা চুল। বাম হাতে রুপালী রঙের চকচকে ঘড়ি। দীর্ঘ ও সুঠাম দেহের অধিকারী যার চেহারার মাঝেই একটা শিল্পীসত্ত্বা লুকিয়ে আছে। সেই লাবু মিয়ার জন্ম ঢাকার কাঁটাবন এলাকায়। পড়াশোনা করেছেন ধানমন্ডি বয়েজে। এমন কোন বাঁশি প্রেমী নেই যে লাবু মিয়াকে এক নামে চেনেনা।

কিশোর লাবু কোমড়ে বাঁশি গুজে ঘুরতেন ক্লাসের সময়েও তার অন্যথা হতো না। বাবা অবশ্য তাতে কিছু বলতেন না। বাবা মরহুম ফেকু মিয়া ছিলেন ব্রিটিশ আমলের সামরিক সৈনিক। কর্মদক্ষতা বলে সেসময় জাপান সফরে গিয়েছিলেন তিনি। বাঁশি বাজিয়েই প্যারেড করাতেন। বাঁশির নেশা লাবু বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। নেশা থেকে পেশা হিসেবে নিলেন বাঁশিকে। আজ ৪৭বছর তিনি এই পেশায় আছেন। ততকালীন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বা ইপসিক বর্তমানে তা বিসিক, সেখান থেকেই ট্রেনিং নিয়েছিলেন।

তার উদ্যোগে এখন ৩০জন কর্মী ওতোপ্রোতো ভাবে কাজ করছেন। তবে বাঁশির জন্য বাঁশ সংগ্রহ থেকে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সকল কাজেই তিনি নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এসব বাঁশ পাওয়া যায়। কখনও ত্রিপুরা এবং আসামেও যেতে হয় তাকে এই বাঁশ সংগ্রহ করতে।

শুধু বাঁশের বাঁশি নয় উদ্যোক্তা লাবু স্টিলের এবং বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়েও বাঁশি তৈরি করেন।

বাঁশি মূলত ২ প্রকার আর এবং হুইসেল বাঁশি। এই দু ধরনের মধ্যে থাকে অনেক প্রকার। উদ্যোক্তা লাবুর সংগ্রহে ৮০ ধরনেরও বেশী বাঁশি আছে। প্রতিটি বাঁশির টিউনের বিষয়টা খুব যত্নের সাথে ঠিক করেন লাবু। লাবু যেমন ভালো বাজায় ঠিক তেমনই তৈরিও করেন। বাঁশি ছাড়াও তিনি হাতবায়া, দোতারা, প্রেমজরি, ডুগডুগি এসব তৈরি করেন।

লাবু মিয়া জানালেন, তার বানানো বাঁশির কদর দেশজুড়ে। আর তাইতো সারাদেশের সব সঙ্গীত স্টোরে তার বাঁশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বাঁশি রপ্তানিকারকগণ তার বাঁশি নিয়ে থাকেন।

উদ্যোক্তা লাবু মিয়া কিছুটা আক্ষেপ করেই বলেন, “দেশে এখন মাত্র ১০জনের মতো উদ্যোক্তা আছে যারা এই বাঁশি শিল্পকে ধরে রেখেছি। আমি চাই আমার সন্তানদের মধ্যে কেও একজন এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখুক”।

উদ্যোক্তার স্ত্রী কাকলী বেগম স্বামী কে সর্বক্ষণ সহযোগিতা করেন। ৩ছেলে ও ১মেয়ে পড়াশোনা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাবার উদ্যোগে সময় দেন। রাজধানীর আল্পনা প্লাজায় তাদের দোকান ‘লাবু ফ্লুট’ দেশের অনেক গুণী শিল্পীর পদচারণা আছে এই দোকানে।

 

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here