জাতীয় বাজেটে সিএমএসএমই খাতকে গতিশীল করার ঘোষণা

0

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিএসএমই খাতকে আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করে তিনি বলেছেন, ‘‘সরকার দরিদ্রবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বাসী। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ বিনির্মাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রকৃত মজুরির কাঙ্ক্ষিত বিকাশ নিশ্চিতকরণ। কর্মসৃজনকে বেগবান করতে আমরা খাতভিত্তিক সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যার উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ হলো: শ্রমনিবিড় ও রপ্তানিমুখী উৎপাদনভিত্তিক প্রবৃদ্ধিতে প্রণোদনা প্রদান, কৃষির বহুমুখীকরণ, সিএমএসএমই খাতকে গতিশীল করা, খাত বহির্ভূত সেবাসহ আধুনিক সেবাখাতকে শক্তিশালী ও বিস্তৃত করা, আইসিটি খাতের উদ্যোগসমূহকে উৎসাহ প্রদান এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে সম্প্রসারিত ও সুসংহত করা।”

এছাড়া বৃহৎ সরকারি বিনিয়োগ এবং নতুন শিল্প ও বাণিজ্যে নীতিসহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন: বিষয়ভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়বস্তু সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার সাথে শিল্পের নিশ্চিত যোগসূত্র স্থাপনের কাজকে অধিকতর জোরদার করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃজন ও উদ্যোক্তা তৈরিকে উৎসাহিত করার জন্য কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। সিএমএসএমই ঋণ ও অগ্রিমের নীট স্থিতির পরিমাণ প্রতিবছর কমপক্ষে ১ শতাংশ বৃদ্ধিসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কেস-টু-কেস ভিত্তিতে নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জামানতবিহীন এবং সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতসহ পুনঃঅর্থায়ন বিবেচনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে “

গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়নের সংক্ষিপ্ত হালচিত্র তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে মুস্তফা কামাল বলেন: আজ এ মহান সংসদে আমি প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশের জনগণ যে উপকৃত হয়েছে তার চিত্রসহ করোনার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র তুলে ধরছি। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে বেতন-ভাতা বাবদ সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সরবরাহ করেছে তা হতে সরাসরি উপকৃত হয়েছে রপ্তানিমুখি শিল্পের ৩৮ লাখ শ্রমিক-কর্মচারি, যার ৫৩ শতাংশ নারী। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে আমাদের দেওয়া ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা এবং একইভাবে কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হতে এ পর্যন্ত সুবিধা গ্রহণ করেছে ৪,৫২৯টি বৃহৎ ও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬১টি কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম ও এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম হতে সুবিধা ভোগ করেছে ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। সরকারের এসব প্যাকেজের ফলেই আজ রপ্তানিমুখী শিল্পসহ অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত পুরোপুরি উৎপাদনে ফিরে এসেছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার দেশে বর্তমানে বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চায়। কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত অর্থনৈতিক শ্লথগতি থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি খাতের পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার যে কাউন্টারসাইক্লিক্যাল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের উদ্যোগের জন্য ৭৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণের তহবিল, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি এবং ২ শতাংশের বেশি সুদের হারে ভর্তুকি প্রদান এবং ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প। অধিকন্তু, সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান, পরিবহন ও ইউটিলিটি সুবিধার উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অগ্রাধিকার এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ এবং এফটিএ) ইত্যাদি স্বাক্ষরের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। উপরন্তু, সরকার রপ্তানি বাড়াতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। পাশাপাশি, সরকার রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানি ভর্তুকি/প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে।”

ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন: আগামী বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান এ অস্থিরতার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারে সেটিও গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। শিল্প উৎপাদন, সিএমএসএমই, সেবা খাত ও গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসৃজন এবং প্রবাস-ফেরতদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপর আগামী বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে এ সমস্ত খাতের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে এবং সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। অধিকন্তু, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ এবং নিম্ন-আয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে/স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা চলমান থাকবে।

তিনি বলেন: বন্যা, অকাল বন্যা, ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি, ঘুর্ণিঝড় ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক অথবা অর্থনৈতিক কোনো সংকটে কর্মহীন বা আয় হ্রাস পাওয়া নিম্ন-আয়ের ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার দেওয়া আমাদের সরকারের একটি অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্যে আমরা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে ‘অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত মোকাবেলায় তহবিল’ গঠন করেছিলাম। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরেও এ তহবিলে ৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here