২২ বছর বয়সেই রিয়েল এস্টেটের মতো কঠিন উদ্যোগ নিয়ে সফল সিয়াত

0
উদ্যোক্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সিয়াত

নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তির বাজারে যদি সাধ্যের মধ্যেই নিজের ফ্ল্যাট কেনা যায় তাহলে নিশ্চই খুব ভালো হয়৷ আর তাই রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অভিজাত ও নিশ্চিন্তে বসবাসের জন্য ছোট, মাঝারি এবং বড় ফ্ল্যাট তৈরি করছে গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। অল্প সময়েই নিরলসভাবে সময় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বস্ত নামে পরিণত করেছেন গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট এর স্বত্বাধিকারী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সিয়াত। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মাত্র ২২ বছর বয়সে রিয়েল এস্টেটের মতো কঠিন কাজের উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন। শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে- অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ‘তারুণ্য দীপ্ত’ প্রতিষ্ঠান গ্রীন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি লিমিটেড। মাত্রই ডিপ্লোমা পাস করে উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংও শেষ করেছেন। এখন ২৮ বছর বয়সী এই তরুন রাজশাহী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক রাজশাহী জেলার সকল ব্যবসায়িকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান সিয়াত মাধ্যমিক পাস করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা করেন। পরে রাজধানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি। সফল এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছোটবেলা থেকে নিজের বয়সের চেয়ে বড়দের সাথে মিশতে ভালোবাসতেন। কখনোই তার ইচ্ছে করেনি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন। বরাবরই ভাবনা ছিলো চাকরি দেবেন। এমন ইচ্ছে থেকেই যেদিন ডিপ্লোমা অধ্যয়নের শেষ ব্যবহারিক পরীক্ষা, ঠিক তার পরদিন থেকে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সাথে যুক্ত হন। সেখানে তিনি মার্কেটিংসহ বেশ কিছু কাজের দায়িত্বে ছিলেন। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য দ্রুতই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় অন্য ডেভেলপার কোম্পানির এমডি যিনি ছিলেন একজন আর্কিটেক্ট, ছদ্মবেশে মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে একজন ক্লায়েন্ট হিসেবে আসেন। তার সাথে গল্প করেন, বেশ কিছু তথ্য নেন; এবং বিদায় বেলায় আসল পরিচয় দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে কাজের অফার করেন। কিন্তু দৃঢ়প্রত্যয়ী মোস্তাফিজুর রহমান সিয়াত জানিয়ে দেন, ‘অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আমি যতদিন অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করবো, ততদিন এ প্রতিষ্ঠানেই করবো। যেদিন আর এখানে কাজ করবো না, সেদিন আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকবে। সেখানে আমি অন্যদের কাজ দেবো।’

সাত মাস ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এসএ উইনার প্রোপার্টিজ-এর লাইসেন্স নেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে। এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল রাজশাহীর রেলগেইট সংলগ্ন বেলিফুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিপরীতে। সবকিছু রেডি হওয়ার পরেও মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন সেসময়। ২০১৫ সাল পুরো একটা বছর তিনি নিজেকে সময় দিলেন, তিনি ভাবতে থাকলেন কী করে আরো ভালো করা যায়।

২০১৬ সালে নর্থবেঙ্গল প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ফার্ম নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন এই উদ্যোক্তা। সাথে ছিলেন এক বন্ধু। প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের দিনই অতিথিদের একজন তার বাসার ডিজাইনের দায়িত্ব দিলেন তাদের। রড সিমেন্টের একজন ব্যবসায়ী এগিয়ে এসে বললেন, আমিও কিছু ক্লায়েন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। খুব ভালোভাবে শুরু হলেও কিছুদিন পর তিনি লক্ষ্য করেন যে তার সহযোদ্ধা কাজে খুব কম সময় দিচ্ছেন। বিষয়টিতে খুবই দুঃখ পেলেন এবং তাকে ছাড়াই এগোতে থাকেন।অনেক ব্যথিত হয়েও প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে টুকটাক কাজ করে যাচ্ছিলেন সিয়াত। ২০১৬ সালে আগের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাজশাহীর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

খুব ভালোভাবে কাজ চলতে থাকে, কিন্তু ২০২০ এ আরেক দুর্ঘটনা। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে অফিস পুড়ে যায়। এমন অবস্থায় মানসিকভাবে ব্যথিত হলেও ভেঙে পড়েননি এই তরুণ। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যর্থতার কারণ অনেক হতে পারে, কিন্তু সফলতার কারণ একটিই- ব্যর্থতার পরও হার না মেনে ‘কঠোর পরিশ্রম করা। শত বাধা উপেক্ষা করে নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে চেম্বার ভবনে আবারো সাজিয়ে তুললেন অফিস। ছোট, মাঝারি এবং বড় রেডি এবং নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট নিয়ে কাজ করছে গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। আজ উদ্যোক্তার স্থায়ী সহযোদ্ধা ২৫ জন। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে ফ্ল্যাট নির্মাণকালে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়। গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি অল্প সময়ে যেমন নগরবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছে, ঠিক তেমনি উদ্যোক্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ‘আমি চাকরি করবো না, চাকরি দেবো’ স্বপ্নটি বাস্তব হয়েছে পুরোপুরি।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা,রাজশাহী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here