একজন সফল উদ্যোক্তা ও রন্ধনশিল্পী ঢাকার ধানমন্ডির মেয়ে আফরোজা নাজনীন সুমি। একই সাথে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, জনপ্রিয় রন্ধণশিল্পী ও উপস্থাপিকা, রেসিপি ডেভেলপার, ফুড স্টাইলিস্ট,শেফ, সার্টফাইড ট্রেইনার, এসেসর এবং ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করে প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করেছেন। এরপর রান্নার উপর নিয়েছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশান এর উপর ন্যাশনাল সার্টিফিকেট এবং ফুড হাইজিন এন্ড স্যানিটেশন এর উপর কোর্স করেছেন। ইন্টার্নি করেছেন হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন ঢাকা থেকে। তারপর সেখানেই তিনি অন কলে কাজ করছেন। এছাড়াও মনিন বাংলাদেশ থেকে বারিস্তা ট্রেনিং নিয়েছেন। এরপর তিনি এনটিভিকিউএফ কুকিং লেভেল -১, এনটিভিকিউএফ বেকিং লেভেল –২ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিটিইবি এর সার্টিফাইড ট্রেইনার এবং এসেসর।
“ব্রাক ব্যাংক তারা ও এফ এম ও” এর সহযোগিতায় আমেরিকার ব্যাবসন কলেজ থেকে এবং “সিটি আলো ও আই এফ সি” এর সহযোগিতায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং উইকানেক্ট এর সহযোগিতায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রাক ব্যাংক তারা এর সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারপ্রেনার্সশিপ সার্টিফিকেশন কোর্স করেছেন।
উদ্যোক্তার মা লায়লা জালালের হাত ধরেই উদ্যোক্তা জীবনের পথযাত্রা শুরু। ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্তা তার মাকে খুব কাছ থেকে দেখে নিজে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। তখনই ভেবেছিলেন বড় হয়ে চাকরি করবেন না, চাকরি দিবেন।
রান্নার প্রতি নিজের ভালোবাসা এবং এই সেক্টরে নতুন শিখতে আসা ব্যক্তিদের জন্য সুমিস কিচেন নামের একটি ক্যাটারিং এবং ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ১০জন কর্মী নিয়ে কাজ চলছে সুমিস কিচেন এর।বর্তমানে এটির সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এই পরিশ্রমী উদ্যোক্তা সুমি। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ “স্বপ্ন দেখতে হবে, যে কাজটিই করবেন ভালোবেসে করবেন, আর একটি কথা পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।”
মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারপ্রাইজ অ্যাডভাইস এন্ড হেল্প সেন্টারে’। তিনি
“ওয়ার্ল্ড শেফ চয়েস ফেডারেশনের” বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট। “বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির” এবং “শেফ ফেডারেশন অফ বাংলাদেশের” আজীবন সদস্য, “উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশনের” এবং “ওমেন কলিনারি এসোসিয়েশন” এর কার্যকারী সদস্য এবং “বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস” এর সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
একশন এইড এর প্রজেক্ট “হ্যাপি হোম” এর রান্নার প্রশিক্ষক হিসেবে এবং ‘প্লেপ্যান’ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বেকিং ও কুকিং শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বরত আছেন আফরোজা। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত কুকিং শো করছেন। প্রথম আলোতে রেসিপি ডেভেলপার হিসাবে কাজ করছেন।
২০২০ সালের বইমেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে “বাহারি রান্না” নামে ব্রেইল বুক প্রকাশিত হয়েছে সুমির। ব্যবসা করতে গিয়ে তাকে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ব্যবসায়ী নারী হিসেবে প্রথমেই তাকে পরিবারের বাধা পার হতে হয়েছে। ব্যবসা করতে গিয়ে বিনিয়োগের ঘাটতি, অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্টের সমস্যা ও নেটওয়ার্কিং দক্ষতার কমতি থাকায় তাকে আরও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।
বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন আফরোজা। যার মধ্যে উই ইন্টারপ্রিনিউর এওয়ার্ড ২০২১, ময়ূরপংখী ইন্টারপ্রেনার্স এওয়ার্ড ২০২১, উই তারা এন্ট্রাপ্রিনিউর এওয়ার্ড-২০২০ (বেস্ট ইন হেলথ কেয়ার) , উইবিডি ওমেন এন্ট্রাপ্রিনিউরস এওয়ার্ড-২০১৯, বাবিসাস এওয়ার্ড-২০১৮, ডিসিআরইউ এওয়ার্ড-২০১৮, এজেএফবি স্টার এওয়ার্ড-২০১৭, রেডিও স্বদেশ সম্মাননা এওয়ার্ড-২০১৭, গোল্ডেন পেন এওয়ার্ড-২০১৭, ইনডেক্স মিডিয়া এওয়ার্ড-২০১৭, চিত্র জগত এওয়ার্ড-২০১৬, নব প্রজন্মের সেরা রন্ধনশিল্পী এওয়ার্ড-২০১৬ উল্লেখযোগ্য। তিনি কলকাতায় “সৃজন সম্মান-২০১৮” এবং “ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসব-২০১৮” সম্মাননা পেয়েছেন।
উদ্যোক্তা বিশ্বাস করেন তার ব্র্যান্ডের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার এবং খাবারের ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশনাই তার ব্যবসাকে মূলত সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে। একইসাথে তিনি তার ব্যবসাকে সবসময় পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই রাখতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। উদ্যোক্তা ভবিষ্যতে স্পেশাল চাইল্ডদের নিয়ে কাজ, রান্না নিয়ে আরও নিরীক্ষা করার এবং একটা রেস্টুরেন্ট করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা