দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তার সৃষ্টি হাতবাক্স। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে ট্যুরিজম স্যুভেনিরের মাধ্যমে বিদেশীদের কাছে দেশকে ব্র্যান্ডিং করা, পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
পাঁচজনের প্রধান টিমে আছেন মো. শাফাত কাদির (সিইও), মো. রবিউল হোসেন (ক্রিয়েটিভ হেড), মো. মোরসালিন অনিক(সাপ্লাই চেইন), মো. খাইরুল বাশার (হেড অব অ্যাডমিন), তানজিনা তারেক। তারা প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এছাড়াও প্রোডাকশন টিম, কালার টিম, ডিজিটাল টিম, প্যাকেজিং টিম সব মিলিয়ে বর্তমানে খণ্ডকালীন ও স্থায়ীভাবে ৩৫ জন যুক্ত আছে হাতবাক্সের সঙ্গে।
হাতবাক্সের কারখানা পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জে আর অফিস আজিমপুরে। কারখানায় মার্বেল স্টোন দিয়ে মিনিয়েচার রেপ্লিকা ও ফ্রিজ ম্যাগনেট তৈরি করা হয়। ক্যামেরা ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপত্যের ছবি সংগ্রহ করে মাপ নিয়ে এই মিনিয়েচারগুলো তৈরির কাজ শুরু হয়। কারখানা থেকে এসব পণ্য তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয় নিজেদের অফিসে। এরপর সেগুলোকে রং করে অনলাইন এবং অফলাইনে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। বর্তমানে তারা প্রায় ৪৫ ধরনের ফ্রিজ ম্যাগনেট, আট ধরনের মিনিয়েচার রেপ্লিকা, সাত ধরনের জেনেটিক ও থিমেটিক দেয়াল ফ্রেম, সাত ধরনের কোটপিন আছে। এ ছাড়া বুকমার্ক, পেপার ওয়েট, কার্ড হোল্ডার, চাবির রিং, ফটোফ্রেম, মগ, কোস্টার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পণ্যও পাওয়া যাবে হাতবাক্স পেজে।
এসব পণ্যের ভেতরে আছে জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, অপরাজেয় বাংলা, বাংলাদেশে মানচিত্র, ষাট গম্বুজ মসজিদ, কক্সবাজার, সুন্দরবন, রাঙ্গামাটি, রিকশা, ট্যাক্সি, ট্রাক, বাস, ক্রিকেট, ঢাকা, পুরান ঢাকা, পানাম সিটিসহ অনেক ধরনের স্থাপনার মিনিয়েচার রেপ্লিকা ও ফ্রিজ ম্যাগনেট। মূলত ফ্রিজ ম্যাগনেট ২২০-৩৫০ টাকার মধ্যে, মিনিয়েচার রেপ্লিকা ১২৫০-২০০০ টাকা, ফ্রেম ৪৯০-১৩৫০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া পেপার ওয়েট ও অন্যান্য ডেস্কটপ সামগ্রী পাওয়া যাবে ৩৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে।
২০১৫ সালে হাতবাক্সের কাজ শুরু হয়। শুরুতে নিজেদের পরিচিতজনদের মধ্যেই ছিল বেচাকেনা। পরে ২০১৭ সালে অনলাইনে পেজের মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরু হয়। মোট পাঁচজন তরুণ উদ্যোক্তা দেশের ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপত্য নিদর্শনের আদলে তৈরি করছেন মিনিয়েচার রেপ্লিকা ও ফ্রিজ ম্যাগনেট। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও নিজেরা কিছু করার স্পৃহা থেকেই মূলত হাতবাক্সের যাত্রা শুরু হয়। ট্যুরিজম স্যুভেনির তৈরির উদ্দেশ্য থেকে এই রেপ্লিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে ট্যুরিজম স্যুভেনিরের মাধ্যমে বিদেশীদের কাছে দেশকে ব্র্যান্ডিং করা, পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও হাতবাক্সের অন্যতম উদ্দেশ্য।
হাতবাক্সের আইডিয়ার একদম শুরুর দিকের গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইও মো. শাফাত কাদির উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ভাবনাটা ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। আমাদের মনে হয়েছিল বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গেলে কোন না কোন সুভ্যেনির নিয়ে আসা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কোন স্যুভেনির নেই। তখন থেকেই ভাবনাটা কাজ করতো।ডিসিসিআই’র একটা ট্রেনিং এর মাধ্যমে হাতবাক্সের আইডিয়েশন করা হয়। সবার কাছ থেকে প্রশংসা ও ভালোবাসা পাওয়ার পর এটা নিয়ে কাজ করা শুরু। কিন্তু আইডিয়া টা বাস্তবে কিভাবে রুপ দিবেন তা জানা ছিলনা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক রবিউল স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী হাতবাক্সের ক্রিয়েটিভ হেড রবিউল হোসেন জুয়েল ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়ে একসাথে কাজ শুরু করি।
২০১৫ সালে ৪ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা হাতবাক্সের পণ্য ঢাকার বাইরে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, খুলনা ও বান্দরবানে পাওয়া যাচ্ছে।
সারাদেশে হাতবাক্সের পণ্য যায়। রাজধানীতে লা মেরিডিয়ান হোটেল, ইউনিমার্ট, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ডিউটি ফ্রি শপ (এয়ারপোর্ট), বিশ্বরং, অঞ্জনস, যাত্রা, বৈঠক ক্যাফেতে পণ্য পাওয়া যায়।
মাসে হাতবাক্সে ১০ হাজার পণ্য উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে হাতবাক্সের আউটলেট দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়ে চলেছেন।
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা