২৫০ টাকা উদ্যোগে প্রতিমাসে দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি

0
উদ্যোক্তা সানজিদা

ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজ ভালো লাগতো সানজিদার। বাড়িতে বসেই টুকটাক অর্ডারের কাজ করতেন মাঝে মাঝে। ২০১৭ সাল থেকে সেলাইয়ের কাজ দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করলেও ২০২০সালে উই-তে যোগ দেবার পর পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা বনে গেছেন।

নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য বাসনা থেকে মাত্র ১২ বছর বয়সেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই ম্যাশিনের কাজ শেখেন শেখ সানজিদা রহমান। হাতের কাজের উপর ছোট থেকেই তার আগ্রহ অনেক।

যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে একাউন্টিং-এ অনার্স-মাস্টার্স এবং যশোর সরকারি বিএড কলেজ থেকে বিএড পাশ করেও চাকরি হয়নি। তাইবলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা তিনি বন্ধ করেন নি। পেছনে না তাকিয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। দূরন্ত স্পৃহা ও প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। কাজের মাধ্যমেই নিজের একটা পরিচয় তৈরী করেছেন তিনি।

গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার কলাবাড়িয়া গ্রামে হলেও সানজিদা জন্ম থেকেই বড় হয়েছেন যশোরের বেজপাড়ায়। ২০২০ সালের জুন মাসের ১৭ তারিখ উদ্যোক্তা সানজিদার বান্ধবী দ্যুতি তাকে উই-তে ইনভাইট করেন। ইনভাইট এক্সেপ্ট করেন সানজিদা। প্রথমদিকে কিছু না বুঝেই সকল পোস্টে লাইক-কমেন্ট করতে থাকেন। নিজেও মাঝে মাঝে গ্রুপে পোস্ট দিতে থাকেন। কিন্তু প্রথমদিকে খুব একটা রেসপন্স পান না। এরপর সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে তার একটা পোস্টে ১৭ হাজার লাইক হয় এবং এক রাতে প্রায় দুই’শর কাছাকাছি জামার অর্ডার আসে। ব্যাস! বদলে যায় একটা জীবনের গল্প। তখন থেকেই শুরু হয় তার কর্মব্যস্ত উদ্যোক্তা জীবন।

হাত খরচ থেকে বাঁচিয়ে ২৫০ টাকা নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন সানজিদা। কুঁশিকাটার বিভিন্ন পণ্য দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে হাতের কাজের ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস, ব্লাউজ পিস, বেবিড্রেস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন। সব কিছুই প্রায় নিজেই তৈরী করে সেল করেন। যশোরের বেজপাড়ার প্রায় তার ২০/২৫ জন এবং আশে পাশে ৫০/৬০ জন কর্মী আছে।

অনলাইনে উদ্যোক্তার পেইজের নাম ‘সানজিদা হস্তশিল্প’। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে সানজিদার পণ্য। অস্ট্রেলিয়ায় পণ্য পাঠিয়েছেন ৫ বার। এছাড়া আমেরিকা, ইন্ডিয়া, পোল্যান্ড ইত্যাদি দেশে পণ্য পাঠিয়েছি। সারা বাংলাদেশের প্রায় চল্লিশটিরও বেশি জেলায় উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি হয়েছে। প্রতিমাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করেন। মূলত প্রি অর্ডারের ভিত্তিতে পণ্য তৈরী করেন উদ্যোক্তা সানজিদা। সেহেতু তার কোনো পণ্যই অবিক্রিত থাকে না।

প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা কিছু না কিছু গুণ দিয়েছেন। যদি সে তার গুণটি খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে পারে তাহলে তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না। চাকরির চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে সানজিদার সফলতার পথ কেউ রুদ্ধ করতে পারেনি। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে যে কেউই হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here