১৬ বছর ধরে ব্লক বাটিকে এক পরিচিত নাম ইসমাইল

0
উদ্যোক্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন

রাজশাহীর ব্লক বাটিক সেন্টার এর স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কাজ করছেন বিভিন্ন ধরনের রংতুলি ও ব্লক বাটিক সামগ্রী নিয়ে। জেলার যতোজন উদ্যোক্তা ব্লক-বাটিক পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, তাদের ৮০ শতাংশই উদ্যোক্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন এর ক্রেতা।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ইসমাইল। একটি রঙের দোকানেও পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এভাবেই রং, কেমিক্যাল, ব্লক বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠা। সেখান থেকে ২০০৬ সালে নগরীর আরডিএ মার্কেটে ব্লক বাটিক সেন্টার নামে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রথমদিকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ঢাকায় রং প্রতিযোগিতায় দুই হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।

সব ধরনের কাঠের ব্লক বাটিক, ফ্রেবিক্স, এক্রামিন, সালফার, প্রুশিয়ান, ভ্যাট, পলিয়েষ্টার, স্ক্রিন প্রিন্ট রং কেমিক্যাল, পোষ্টার কালার, তুলি, গ্লিটার, সোনালী, রূপালী, আফসানসহ চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তাদের যাবতীয় পণ্য রয়েছে ইসমাইল হোসেনের ব্লক বাটিক সেন্টারে।

উদ্যোক্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, “শুরুতে আমার দোকানে সব ধরনের কালার পাওয়া যেতো। আস্তে-আস্তে ব্লক বাটিকের যাবতীয় পণ্য যুক্ত করতে থাকি। এক পর্যায়ে কাঠের ব্লক যখন অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আনতাম তখন দুয়েকদিন পর পর তারা দাম বাড়িয়ে দিতেন যা আমার ব্যবসায় ক্ষতি করতো। পরে আমি নিজে কাঠ খোদাই করা শিখি, আমার পরিবারের সদস্যদেরও শেখাই। এখন আমার সাথে তারাও কাঠে খোদাই করে ব্লক তৈরি করতে শিখে গেছে।”

তিনি বলেন: আমরা কাস্টমারের পছন্দ অনুযায়ীও ব্লক তৈরি করে থাকি। এছাড়া মাঝে-মাঝে ক্রেতাদের চাপ থাকায় আমরা বাইরে থেকেও ব্লক সংগ্রহ করে থাকি। আমার খুব ভালো লাগে রাজশাহীর যতো উদ্যোক্তা ব্লক বাটিক নিয়ে কাজ করেন, তাদের সিংহভাগই আমার ক্রেতা। আমি সবসময় চেষ্টা করি তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রোডাক্ট তাদের হাতে তুলে দিতে।

”আমার প্রতিষ্ঠানে যে পণ্যগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলো তো বটেই, পাশাপাশি রংসহ বেশ কিছু পণ্য যেগুলো আমি বাইরে থেকে আনি, সেগুলোও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকি। অনেক রং আছে যেগুলো কেউ ভেঙ্গে বিক্রিই করেন না। পুরো রঙের বক্স ক্রয় করতে অনেক উদ্যোক্তার সমস্যা হয়। তাদের কথা মাথায় রেখে আমি সেগুলো খোলাও বিক্রয় করে থাকি যাতে আমার উদ্যোক্তা ক্রেতারা কোন সমস্যায় না পড়েন,” বলে জানান ইসমাইল।

তার ক্রেতা রংরাজত্বের স্বত্ত্বাধিকারী জুবাইদা তন্বী বলেন: আমি পাঁচ বছর ধরে ইসমাইল ভাইয়ের থেকে রং, ব্লকসহ বিভিন্ন পণ্য নিচ্ছি। উনার পণ্যের মান এবং তাদের ব্যবহার সবকিছুই প্রশংসনীয়।

ব্লক বাটিক সেন্টারের বহুবছরের অন্য ক্রেতারাও উদ্যোক্তা বার্তাকে একই মতামত জানান।

উদ্যোক্তা মুন্নি আক্তার বলেন: আমি বহুবছর যাবৎ ইসমাইল ভাইয়ের থেকে ব্লক, রং এবং কেমিক্যাল নিচ্ছি। যারা হ্যান্ডপেইন্ট করছেন তাদের থেকেও ভাই বহুবছর এগুলো নিয়ে কাজ করতে করতে এ বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গেছেন। আমাদের খুব ভালোভাবে এগুলো ব্যবহারের নিয়ম বলে দেন। আর তিনি যেহেতু উপকরণগুলো কিনে নিজে কেমিক্যালগুলো নিজে তৈরি করেন, তাই মানের কোন হেরফের হয় না। এখন পর্যন্ত আমাকে কোন ক্রেতা বলেননি কাপড়ে রং উঠে যাচ্ছে বা অ্যামব্রস ফেটে যাচ্ছে।

পুরাতনের পাশাপাশি নতুন এক উদ্যোক্তা বলেন, তিনি ইসমাইল হোসেনের প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সুনাম শুনে রাজশাহীর বাঘা থানা থেকে ব্লক, রং তুলি ইত্যাদি নিতে এসেছেন।

ষোল বছরে নগরীর ব্লক বাটিক সেক্টরের অতি পরিচিত এক মুখ হয়ে উঠেছেন ব্লক বাটিক সেন্টার এর স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন। বর্তমানে রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের নিচতলায় তার দুটি দোকান রয়েছে। পুরো পরিবার সবসময় সহযোগিতা করছে তাকে। তার এক চাচা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে দু’জন সহযোদ্ধা আছেন।

আগামী দিনের পরিকল্পনা জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমার আরো ২/৩ টা দোকান হবে বা অতিরিক্ত লাভ করবো, এটা কখনোই আমার পরিকল্পনাতে আসেনি। আমি চাই কোন ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেবো না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল পণ্য যাতে তাদের হাতে তুলে দিতে পারি এবং পণ্য কোয়ালিটি যেন এভাবেই বজায় রাখতে পারি, এটাই আমার চাওয়া। তাহলে ক্রেতারা বারবার আমার কাছে আসবেন আর ক্রেতা বাড়লে বা এভাবে আসতে থাকলে আমি আরও অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো।”

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here