১২ হাত গল্প নিয়ে এগিয়ে চলা

0
উদ্যোক্তা পৃথুলা ঘোষ

উদ্যোক্তা পৃথুলা ঘোষ মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি শেষ করে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন।

তার জন্ম ঢাকায়, বেড়েও উঠেছেন ঢাকাতেই। ছোটবেলা নিয়ে বলতে গেলে তার মনে পড়ে অনেক স্বপ্নের কথা। মনে পড়ে তিনি আইনজীবী হতে চাইতেন। আবার শৈশব থেকেই যেহেতু তিনি গানের সাথে যুক্ত, তাই গায়িকা হবেন বলেও ভেবেছিলেন। উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতারে একজন প্রফেশনাল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন ছয় বছরেরও বেশি সময়। একটা স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবেও যুক্ত আছেন। বাড়িতে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থী তার কাছে সঙ্গীতের তালিম নেয়।

তবে, কার মূল কাজ মূলত তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে। দেশের তাঁতশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে পুরো বিশ্বে দেশীয় শাড়ি তুলে ধরাই তার কাজের মূলমন্ত্র।

পৃথুলা ঘোষ উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় চার বছর। কাজের শুরু ২০১৮ সালে। দিনটা ছিল ২৮শে নভেম্বর। নানারকম ভাবনা চিন্তার পর তিনি ঠিক করেছিলেন, অন্যের অধীনে চাকরি না করে নিজের উদ্যোগে কিছু করবেন। তার নিজের বলে কিছু থাকবে, তার কাজ দিয়ে মানুষ তাকে চিনবে। অবশেষে শুরু করলেন ‘১২ হাত গল্প’।

তিনি মূলত কাজ করছেন দেশী হ্যান্ডলুম সুতি শাড়ি নিয়ে। তাঁতিদের বানানো একরঙা শাড়িতে নিজে ডিজাইন করে সেটাকে স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট এর মাধ্যমে নতুন রূপ দেন। নকশা করা শাড়ি নিয়ে কাজের পাশাপাশি রাখার চেষ্টা করছেন ছেলেদের পাঞ্জাবি, বিভিন্ন গজকাপড়, ব্লাউজপিস, হাতে বানানো গহনা, শীতের সময় শাল, চাদর ইত্যাদি। এছাড়া এখন দেশীয় সিল্ক নিয়েও কাজ করছেন।

পরিবারের সহোযোগিতা পেয়েছেন অনেক। পরিবারের সদস্যদের সাপোর্টের কারণে কোন বাধাই বাধা মনে হয়নি। কিন্তু করোনা যখন শুরু হলো, আশেপাশে অনেককেই দেখেছেন বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে। তিনিও ভাবতেন যে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে তার কিভাবে কাজ এগোবে। কিন্তু তিনি মনোবল হারাননি।

শুধুমাত্র একমাস কাজ বন্ধ রেখে ঘরে থাকা স্টক দিয়েই তার কাজ চালিয়ে গেছেন। হয়তো ক্রেতারা কম কেনাকাটা করেছেন, তখন একটু আর্থিক সংকট হয়েছে, কিন্তু তিনি মনোবল হারাননি। বুকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে হলেও কাজ চালিয়ে গেছেন। ওই সময়টাতে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিলেন। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, করোনার প্রথম দিকে লস হলেও পরে তা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

পুরো দেশেই তার পণ্য যায়। দেশের বাইরের ক্ষেত্রেও তিনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ভারতসহ ১২টা দেশে তার পণ্য পৌঁছেছে।

এই উদ্যোক্তার কাজের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তার ছোট ভাইয়ের। বাবার কাছ থেকেও সহযোগিতা পান অনেক। তবে, মায়ের কথা না বললেই নয়। তার পেইজের অন্যতম প্রধান মডেল তার মা, আর বোন হচ্ছেন দ্বিতীয় প্রধান মডেল।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন: অনেককিছুই ভাবি, তবে ভেবেচিন্তে ছক কাটি। আমার স্বপ্ন ১২ হাত গল্পের একটা আউটলেট হবে। আউটলেটের এক পাশে থাকবে আড্ডা কিংবা গান-বাজনা করার জায়গা। সকলে এসে নিজের মতো করে শাড়ি বাছাই করে নিতে পারবেন। থাকবে চা কিংবা কফির আয়োজন। আমার নিজের একটা জায়গা থাকবে। সেখানে একটা দেয়াল জুড়ে থাকবে রবীন্দ্রনাথের ছবি, কবিতা কিংবা গান। আর অন্য দেয়াল জুড়ে সকলের জন্যে বই। আপাতত এতোটুকুই।”

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here