রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নাগরিকসেবা অনলাইনে প্রদানের জন্য ’স্মার্ট রাজশাহী’ ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ওয়েব, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ এই তিন ফরম্যাটের মাধ্যমে সেবাগুলো নিতে পারবেন রাজশাহী সিটির বাসিন্দারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সেলট্রন।
সম্প্রতি ভার্চ্যুয়াল এক অনুষ্ঠানে এ স্মার্ট অ্যাপ চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অ্যাপের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সব সেবা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার জন্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক আনন্দিত যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরে রাজশাহীবাসীর জন্য স্মার্ট রাজশাহী অ্যাপ আমরা তুলে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, রাসিক মেয়রের নির্দেশে স্মার্ট ও আধুনিক সিটি গড়তে ‘স্মার্ট রাজশাহী’ ওয়েবসাইট ও অ্যাপস প্রতিষ্ঠা করা হলো। সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় এলো। এখন থেকে অনলাইনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন নাগরিকরা।
তিনি জানান, বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এই অ্যাপ কাজে লাগবে। আবেদন ফরম পূরণ, ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া, হোল্ডিং ও ট্যাক্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি বিলসহ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে পে করতে পারবেন। তিন বছর তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগ অ্যাপটি পরিচালনা করবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমরা ডিজিটাইলেজেশনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে পলক বলেন, সিটি করপোরেশনের মধ্যে স্কুল অব ফিউচার নামের একটি মডেল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করব। যেখানে শুধু ল্যাব নয় ক্লাস রুম ও ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক স্কুলে তাদের হাজিরা, কারিকুলামসহ নানা সেবা থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো সহজেই সবার হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। আমরা সে লক্ষ্য পূরণেও বেশ ধাপ এগিয়েছি। আজ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিভিন্ন ভাবে সেবা নিচ্ছেন। অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, দেশ অনেক এগিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের নিকট বাস্তব রূপ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিনটি প্লাটফর্মে ‘স্মার্ট রাজশাহী’ ব্যবহার করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সেবাগুলো পাবেন নাগরিকরা। এগুলো হলো— ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস। অনলাইনে সেবা পাওয়ার নাগরিক সেবার উন্নয়ন ঘটবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ২৪টি সেবা প্রদান করা হলেও আগামীতে সেবার পরিধি বাড়বে।
‘স্মার্ট রাজশাহী’ ওয়েবসাইট ও এ্যাপে যা থাকছে
সিটি করপোরেশন সচিবালয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রকৌশল, রাজস্ব ও স্বাস্থ্য বিভাগকে অনলাইনে এ্যাক্সেস করা যাবে। এই সকল বিভাগের সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ যেমন- বিরোধ নিস্পত্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ, আর্থিক সহযোগিতা, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, বিবিধ সনদপত্র, সিটি কর্পোরেশনের স্থান ভাড়া, ইজারা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদার লাইসেন্স নবায়ন, তালিকাভূক্ত ভূমি ব্যবহার অ-সম্মতি, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ, নেম সেপারেশন, হোল্ডিং ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স রিভিউ, হোল্ডিং ট্যাক্স পুননির্ধারণ, প্রেমেসিস নিবন্ধন, পরিবশে দূষণ প্রতিরোধ, পোষা প্রাণীর লাইসেন্স, মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন প্রভূতি সেবার জন্য নাগরিকরা এখন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। শুধু আবেদনই নয় সেবার নির্ধারিত মূল্য, সেবার অগ্রগতি যাচাই করার পাশাপাশি চূড়ান্ত সেবাও অনলাইনে পাওয়া সম্ভব হবে।
নিবন্ধন ও আবেদন
https://smartrajshahi.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে নাগরিক সেবার জন্য একজন নাগরিককে নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রসহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। একবার নিবন্ধন করলেই নাগরিক শুধুমাত্র লগ ইন করেই পরবর্তীতেও ভিন্ন ভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনের পর নিবন্ধত নাগরিক সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহের সেবা থেকে নির্দিষ্ট সেবার জন্য অনলাইন ফরম পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সংযুক্তিগুলো নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আবেদনের সাথে যুক্ত করতে হবে।
সেবা মূল্য পরিশোধ
সেবা প্রাপ্তি জন্য সেবার নির্দিষ্ট মূল্য দুইভাবে পরিশোধ করা যাবে। একটি হচ্ছে- অনলাইনে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা বিক্যাশের মাধ্যমি সিটি কর্পোরেশনের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে ঘরে বসেই মূল্য পরিশোধ করা যাবে। অবার দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করে পেমেন্ট স্লিপটি ছবি তুলে বা স্ক্যান করে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানের পর নাগরিকরা তাদের প্যানেল থেকে পেমেন্টের স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। একটি সফল পেমেন্টের পর নাগরিকের আবেদনটি পরবর্তী ধাপের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
সেবা প্রাপ্তি
পেমেন্টেটি সফল হলে অনলাইল প্লাটফর্মের ভেতর দিয়েই আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাবে। তাদের কার্যক্রম শেষ হবার পর নাগরিক সেবার জন্য চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হলে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেবাটি তাঁর প্যানেল থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। বিভিন্ন সনদ, লাইসেন্স, অনুমতি পত্র, বরাদ্দ প্রভূতির ডিজিটাল ভার্সন নাগরিকরা সিস্টেম থেকে ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনে উপস্থিত হয়েও হার্ড কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সেবা প্রাপ্তি অগ্রগতি যাচাই
নাগরিকরা তাদের ইউজার প্যানেলে লগইন করেই আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রত্যেকটি আবেদন পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোশেনের কোন কর্মকর্তার টেবিলে আছে তা সিস্টেম থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা সম্ভব হবে। কতদিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে, তাও এই সিস্টেম থেকে জানা যাবে।
উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট