‘সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ’ দিয়ে তরুণ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হলেন সাদ্দাম

0
উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন

আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তির মিরাকলের মতো পাল্টে গেছে ৷ মানুষের জীবন যাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তির মিরাকল প্রয়োগে একবিংশ শতক এখন পাল্টে গেছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিও পৃথিবীর কোনো দেশেই পৌছাতে আর একদমই সময় লাগে না ৷ বিগত ১০/১২ বছরে বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হয়েছে ৷ যার মধ্যে বাংলদেশে ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন, তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ৷

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি “ডিজিটাল বাংলাদেশ” শিরোনামে সারা দেশে প্রযুক্তির বিকাশের যে উদ্যোগগ্রহণ করেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা, সমাজ পাল্টানো আন্দোলন,সামাজিক মেলামেশা, ব্যাংকিং সবকিছুই চলছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ৷ আর ইদানিং কালে দেশের উদ্যোক্তার আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে কাজ করছে তা হলো ডিজিটাল প্রযুক্তির নিরাপত্তা৷ নিরাপত্তার ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা ও সতর্কতা ছাড়াই আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলছি যা অভাবনীয় সব সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ব্যক্তি, সমাজ, ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে।

আজ আমরা আলোচনা করবো এমনই একজন তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোক্তা যার নাম সাদ্দাম হোসেন, বর্তমানে উইনকি টেক নামক সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।

উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেনের জন্ম মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন। উদ্যোক্তা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ হতে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে উদ্যোক্তা এখন কাজ করছেন নিরাপত্তা বিষয়ক “সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ” নিয়ে।

উদ্যোক্তার উইনকি টেক প্রতিষ্ঠান মূলত সমাজ জীবনের বাস্তবিক সমস্যা সমাধানে একটি যুগোপযোগী উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ’ নিয়ে কাজ করছে। এ ধরনর আরো উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার প্রয়াসে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরন করা হয় উইনকি টেক। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত উইনকি টেকে বর্তমানে ৮জন কর্মী কাজ করছে।

গত সাড়ে ৪ বছরে উইনকি টেক তার সাফল্যর গলায় পড়েছে বহুমাত্রিক অর্জন ও অ্যাওয়ার্ড এর মালা। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ড ২০২০, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্তৃক ২০১৭-২০১৮ স্বীকৃতি ও উদ্ভাবনী অনুদান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস কর্তৃক মেধাস্বত্ব হিসেবে কপিরাইট সনদ, একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) আয়োজিত দেশসেরা ১০ জনের মধ্যে নির্বাচিত সম্মাননা। এছাড়া ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলাতে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের সম্মাননা অর্জন।

প্রতিষ্ঠানের শুরুর কথা জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘উদ্যোক্তা জীবনের পরিশ্রমের কোনো সংজ্ঞা হয় না। সাধারণ জীবনের সকাল ৯-৫ টার অফিসের সময়ের গন্ডিকে ছাড়িয়েও টানা দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করতে হয়েছে বা এখনো করছি। লেগে থাকার ফল আজকের আমার এই প্রতিষ্ঠান।’

উদ্যোক্তা যখন তার উদ্যোগ ও স্টার্টআপ শুরু করেছিলেন,তখন উদ্যোক্তার কাছে তেমন কোনো ইনভেস্টম ছিলো না। ট্রেডলাইসেন্স করেছিলেন পরিচিত এক শুভাকাঙ্খীর কাছ থেকে লোন নিয়ে। সময়ে পথ পরিক্রমায় উদ্যোক্তার এই উদ্যোগটি উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসেবে আইসিটি বিভাগ/ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্ভাবনী অনুদান পাবার মর্যাদা লাভ করে।

উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন এর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এআই, এআর, ভিআর বেসড কিছু ইনোভেটিভ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ চলছে। এই কাজগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কয়েকটি অ্যাপ নিয়ে কাজ করা হয়।

সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন , ‘সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি প্রধান কাজ হলো নাগরিক নিরাপত্তা, জরুরি সাহায্য ও অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা ছাড়াও নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায়ও সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে এই সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি নিয়মিত ডেভোলপ করা হচ্ছে। ‘

সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি কাজ কিভাবে করে সেই সম্পর্কে উদ্যোক্তা আরো বলেন,’ বিপদের সময় সেবা পাওয়ার জন্য ব্যবহারকারীকে মোবাইলে (স্মার্টফোনের) অ্যাপটি ইন্সটল করে সবসময় সক্রিয় রাখতে হবে। যে কোনো বিপদের সময় স্মার্টফোনের পাওয়ার বাটনটি পরপর ৩-৪ বার প্রেস করার সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ পুলিশের স্টেশনের মোবাইল নম্বর ও অ্যাপ সার্ভারে, একইসাথে অ্যাপে পূর্বে সেটআপকৃত পরিবারের নম্বরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুক্তভোগী ব্যক্তির অডিও, ফুটেজ এবং অবস্থান গুগল মানচিত্র লিংক সহ প্রয়োজনীয় বার্তা মেসেজ আকারে পৌঁছে যাবে। এসময় মেসেজের গুগল মানচিত্র লিংকে ক্লিক করলে ভিকটিমের অবস্থান জানা যাবে।’

এই অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর কোন ইন্টারনেট কানেকশন বা ডাটা অন থাকা লাগবে না।

এছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে এক ক্লিকে জরুরী সেবা যেমন হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, ব্লাড ব্যাংক, নিকটস্থ হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, এটিএম বুথ, ব্যাংক, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট,শপিংমল ইত্যাদির সাহায্য নিতে পারবেন গ্রাহকেরা।

সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটির পিছনে যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রকল্প কনসালট্যান্ট, একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) এর আইল্যাবের প্রযুক্তি প্রধান ফারুক আহমেদ জুয়েল এবং ইইআরটিবিডির সিনিয়র সিস্টেম প্রকোশলী প্রকল্প সুপারভাইজার কৃষ্ণ রায় মিথুন । প্রকল্পটির পাইলট প্রকল্প হিসেবে মেহেরপুর জেলাতে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে আছেন মামুন-অর-রশিদ। এই অ্যাপটি এখনো পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে রয়েছে।

দেশের সর্বত্র তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগ আমাদের দেশের উন্নয়নের একটি বড় নিয়ামক৷ দেশের সবার তথ্য, অর্থ, এবং জাতীয় নিরাপত্তার সবকিছুই নিরাপদে থাকুক। এই ডিজিটাল প্রযুক্তির নিরাপত্তা বাংলাদেশের সবার জন্য হোক নিরাপদ।

সেখ মুসফেক -উস -সালেহীন
উদ্যোক্তা বার্তা
ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here