সফল উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান ও তার কর্মীগণ

আমার বাবা আমাকে বলতো, সফলতার জন্য দুটো বিষয় খুব জরুরী। এক, তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে। আর দুই, কিছু অর্জন করতে হলে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। আমার মনে পড়েনা কখনো বাবার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছি কিনা। তিনি নিশ্চয় চেয়েছিলেন সন্তান নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুক।

সময়টা ২০১২, কে.পি.সি. ইন্ডাষ্ট্রির যাত্রা শুরু। অল্প পুঁজি। মাত্র ১০ লক্ষ টাকা আর ব্যাংক দিলো ৩০ লক্ষ টাকা। টাকার সল্পতার কারণে সমস্ত সরকারি কাগজপত্র তৈরি করা থেকে, ব্যাংক লোন পাওয়া, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ফ্যাক্টরি ভাড়া, ফ্যাক্টরির পরিবেশ ঠিক করা সবকিছু একাই করতে হলো।

সফল উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান

যেদিন প্রথম মেশিন আসলো সেদিন ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দিলাম এবং আমিসহ ৪ জন হলাম, শুরু হলো আনুষ্ঠানিক ভাবে কে.পি.সি’র যাত্রা।

চারপাশ জুড়ে শুধুই কারখানা। সামনে ছোট একটি গেট। গেট পেরুলেই সরু গলি। গলির শুরুতেই ছোট একটি কারখানা। মাত্র ১২০০ স্কয়ার ফিট। ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিললো দক্ষ শ্রমিক আর আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে বাহারি রঙ আর নানান আকারের কাগজের কাপ।

একেকটি কাপ যেন স্বপ্নের মত। একটি মোটর সাইকেল নিয়ে, কাজের স্যাম্পল নিয়ে চলে যাই শেভরন কোম্পানির অফিসে। প্রথম মিটিংয়েই মাসে ২ লাখ পিস কাপের অর্ডার পাই। মিটিং শেষে বাবাকে ফোন করে বলেছিলাম “বাবা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির অর্ডার পেয়েছি”। বাবা বলেছিলেন, “আলহামদুলিল্লাহ্‌”। চোখে মুখে তখন ঝিলিক খেলছে, কাজের গতিও বেড়ে গিয়েছিলো অনেক।

উদ্যোক্তার ফ্যাক্টরিতে তৈরি পণ্যসমূহ

প্রথম ৬ মাসে ৭০টির মতো গ্রাহক তৈরি হয়ে যায় যা প্রতি বছর দিগুণ বৃদ্ধি পায়। একে একে নেসলে, পেপসি, ইগলু, প্রাণ, হসপিটাল, ফার্মাসিটিক্যাল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফি শপ সবাই পেপার কাপের গ্রাহক তালিকায় যোগ হয়। এ যেনো নগর জীবনে আধুনিক পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহারের এক দুরন্ত প্রতিযোগিতা। আর সেই সাথে ছুটে চলা শুরু হয় কে.পি.সি পেপার কাপের।

মেলায় অংশ গ্রহনকালীন কেপিসি’র স্টল

মা আমাকে নিয়ে খুব শঙ্কিত ছিলেন সেই ছোট বেলা থেকেই। সব সময় দেখতাম তার চোখ ছলছল করছে। কদাচিৎ হাসতে দেখেছি মা’কে। তখন থেকেই মনের ভেতর একটি দৃঢ় সংকল্প ছিল মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাবো। মা’কে পবিত্র হজ্জ পালন করার জন্য সৌদিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই। হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় বিমানবন্দরে যখন বিদায় দিতে গিয়েছিলাম তখন মা খুব কেঁদেছিল। আর যেদিন আমি জাতীয় বর্ষসেরা উদ্যোক্তা পুরষ্কার গ্রহণ করি সেদিনই মা’কে আমি হাসতে দেখেছি।

চলবে…

তরুণ সফল উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান 
বর্ষসেরা এস এমই উদ্যোক্তা -২০১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here