উম্মে রোকাইয়া প্রিমাঃ নিজের ভবিষ্যতের ছবিটা মনের ফ্রেমে ঠিকই এঁকে নিয়েছিলেন উদ্যোক্তা সামিহা নওশীন। তাইতো লুকিয়ে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির ফাইন আর্টস এ ভর্তি হন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকান নি সামিহা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইনে সৃজনশীল উদ্যোক্তা সামিহা নিজস্ব নকশা ও উপাদানে তৈরি করছেন কাঠের গহনা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজের সৃজনশীলতার জানান দিতেই পেইজ খুলেন তিনি। আর এই পেইজের নামকরণের পেছনের গল্পটা খুব ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো।

উদ্যোক্তার তৈরি ‘সূচনা’র কাঠের চুড়ি

ছোট্টবেলায় ‘সূচনা’, নামটি তার মায়ের দেওয়া।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকেই ‘সূচনা’ নামটা দিয়েই ফেইসবুক পেইজের যাত্রা শুরু করে সামিহা।

পেইজ খোলার পর ধীরে ধীরে ফেইসবুকের মাধ্যমে সূচনা’র পরিচয় হতে থাকে। এর কিছু দিনের মধ্যে পহেলা বৈশাখের জন্য এক গানের দল চাঁদপুর থেকে ৫০ জনের জন্য কাঠের গহনা অর্ডার করে সূচনায় ।

উদ্যোক্তা সামিহা হাতের কাজের নৈপুণ্যতা আর সৃজনশীলতা বিশেষ করে তার কাঠের গহনার শৈল্পিক ও নিপুণ কাজ সবাইকে মুগ্ধ করে। তার হাতে বানানো কাঠের গহনা, ব্রেসলেট, আংটি, এন্টিক অর্নামেন্টস, টিপ কিংবা কোন ক্রাফট্ বা ওয়ালেট শুধু চট্টগ্রামে নয় ছড়িয়ে পরে বাংলাদেশের আরো অনেক জেলায়।

যদিও স্বপ্ন পূরণের এই পথটি খুব মসৃণ ছিল না, প্রথম দিকে অগোছালো ছিল অনেককিছু। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে শুধরে যায়, শিখে নেয় বেশ খানিকটা।

উদ্যোক্তার তৈরি ‘সূচনা’র কাঠের আংটি

জানতে চাইলে সামিহা নওশীন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমার ছবি আঁকার বড় ঝোঁক ছিল। সেই কৌতুহলের জের ধরে, ২০১৪ সালে বাবা মার কাছে লুকিয়ে চুপি চুপি চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির ফাইন আর্টসে ভর্তি হই। তখন ঠিক অতশত ভাবি নি, শুধু ভেবেছি সাদা ক্যানভাস কিভাবে নিজের মত করে রাঙিয়ে তোলা যায়।

নিজের সৃজনশীলতায় সাদা ক্যানভাসে কিভাবে রাঙিয়ে তোলা যায় জানিয়ে সামিহা বলেন: “২০১৬ সালে শিল্পকলার সঞ্জিত স্যারের কাছে ফোমশিট দিয়ে ক্রাফট্  তৈরি ক্লাসটা আমার মনের জমে থাকা কৌতূহল আরও সজীব করে তুললো । সেই ক্লাসে ফোমশিট ঘাটতে ঘাটতে নানা রকম সৃজনশীলতা তার মাথায় ঘুরতে থাকে। তাই  ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেরি না করে টিউশনের পাওয়া টাকা দিয়ে ফোমশিট কিনে নিল চটজলদি, আর রাতভর বসে নানা রকম ক্রাফট্ বানাই নিজের মত করে। তবে যেই কাজটিতে আমার মন আটকে যায় তা হল ফোমশিট নিয়ে ওয়ালেট। প্রথমটা নিজে বানিয়ে নিজেই রেখে দেই।”

উদ্যোক্তার তৈরি ‘সূচনা’র রঙিন মালা

এরপর ভালোবেসে আর ও ১০ টা বানিয়ে ফেলেন  ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ তে  বন্ধুদের উপহার দিবে বলে। বন্ধু দিবসে এই বিশেষ উপহার পেয়ে সব বন্ধু তো বেশ খুশি। একজন তো রীতিমত ফেইসবুকে এক গার্লস গ্রুপে পোস্টও করে দেয় বন্ধুর হাতের বানানো ওয়ালেটের ছবি দিয়ে। আর সেই পোস্ট থেকে পাওয়া যায় অসংখ্য মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসা।

নিজের প্রথম অর্ডার সম্পর্কে সামিহা বলেন: “বন্ধুদের গিফট দেওয়ার পর একজন ফেইসবুকে ফোমশিট ওয়ালেটের ছবি গ্রুপে পোস্ট করলে পেয়ে যাই প্রথম অর্ডার। একদিনের মধ্যে ৬০ টা অর্ডার চলে আসে সেই ফোমশিটের ওয়ালেটের।

প্রথমে, আনন্দিত হলেও পরে ঘাবড়ে যাই অনেকটা। কিন্তু শিল্পকলার সঞ্জিত স্যারের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ  আর বন্ধুদের  উদ্দীপনায় আবার মনে প্রাণে সাহস জুগিয়ে ভালো লাগার কাজটি শুরু করি। টিউশনের ২০০০ টাকা বিনিয়োগ করে অনেকটা ভালোবাসা আর খানিকটা বাধা পেরিয়ে তার প্রথম অর্ডার সফলভাবে দিতে সক্ষম হই।

উদ্যোক্তার তৈরি ‘সূচনা’র গহনা

দ্বিতীয় অর্ডারটা আসে সামিহার ছোটবেলার স্কুল রি-ইউনিয়নে ২০০ জন বন্ধুদের জন্য ফ্লাওয়ার ক্রাউন বানিয়ে দেওয়ার। এবং এই অর্ডারটিও উদ্যোক্তা খুব সুন্দর ও সফলভাবে পূরণ করে সকলের মন জয় করে নেয় প্রথমটির মত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে চাইলে উদ্যোক্তা সামিহা বলেন: “সামনে  তার আঁকা পেইন্টিং, ওয়েস্ট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে আকষর্ণীয় কিছু ক্রাফট্, কাঠের তৈরি নানা শো পিস আমরা তার পেইজে দেখতে পাবো।”

উদ্যোক্তার তৈরি ‘সূচনা’র গহনা

তিনি আরও জানান, ‘সূচনা’ নিয়ে তার স্বপ্ন বিশাল, তিনি “সূচনা” কে ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চান, যেখানে বাংলার ঐতিহ্য ও শিল্পের কথা মাথায় রেখে হাতের বানানো পণ্য স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দিবে দেশ বিদেশে সকল ক্রেতাদের হাতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here