উদ্যোক্তা- সাবিনা ইয়াসমিন

কবি সাহিত্যিকদের লেখনীতে দেখা যায় জীবন কখনও উজানে বয়, কখনও বা ভাটায়।আজ যে সংগ্রামী নারীর, যে উদ্যোক্তার কথা পড়বেন সেখানেও দেখবেন জোয়ার- ভাটার খেলা। ভাটার টানে পিছিয়ে আসা আর উজানে বেয়ে চলার কথা। ১৯৮৫ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাজলি গ্রামে জন্ম তার। বাবা ছিলেন একজন সৎ পুলিশ অফিসার।

ছোট বেলা থেকেই পশুপাখি এবং দরিদ্র অসহায় মানুষের প্রতি অদম্য প্রেম ভালোবাসা। এসএসসি পরীক্ষার আগেই মাত্র ১৪ বছর বয়সে সামাজিক প্রথা অনুযায়ী বিয়ে হয় ফরিদপুরের কামারখালির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। বিয়ের পর স্বামী তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। তখন থেকেই শুরু হয় ভাটির গল্প।

এক বছর পরে কোলজুড়ে চলে আসে মেয়ে তাজমিন রহমান স্পৃহা। শুরু হয় বাচ্চাকে লালন-পালনের দায়িত্ব। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় ছিলো মেয়েকে দুধ কিনে খাওয়ানোর মতো পরিস্থিতি ছিলো না। দুচোখের অশ্রু ছাড়া কিছুই ছিলনা মেয়েকে দেওয়ার মত। সময় এতটাই খারাপ ছিল যে চাকুরীতে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য কাছে রিক্সা ভাড়ার টাকাও ছিলো না। এ পর্যন্ত বলে আবেগ আর ধরে রাখতে পারলেননা ইয়াসমিন। কেঁদে ফেললেন প্রায়।

অনেক কষ্টে মেডিকেল সেন্টারে ছোট্ট একটা চাকুরী হয়। সাবিনা অনুভব করলেন স্বল্প বিদ্যা নিয়ে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছেনা এবং জীবনে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সাবিনা আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ছাত্রী হিসেবে সাবিনা মেধাবী ছিলেন তাই কষ্ট হলেও এ.সি.আই.টি টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর সৌদি আরব এম্বেসীতে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে কাজে সুযোগ হয়। এভাবে চলতে থাকে তার সংসার আর কর্ম জীবন। কিছু দিন পরে নিজের মাঝে স্বপ্ন তৈরি হয় অন্যের প্রতিষ্ঠানে সময় ব্যয় না করে নিজেই একটা কিছু করবেন। চাকরির পাশাপাশি সাবিনা শুরু করেন প্যাকেজিং এন্ড প্রিন্টিং এর কাজ।

উজানের পথে যাত্রা যেন হলো শুরু , সুর্য উঠছে, কেটে গেছে অন্ধকার রাত। পিছে আর ফিরে তাকাতে হয়নি সাবিনাকে। চাকরি থেকে জমানো টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে শুরু সেই ব্যবসা। ব্যবসায় মানসিক সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তার স্বামী- মোঃ হামিদুর রহমান। সাবিনা বলেন, “স্বামীর অনুপ্রেরণায় আজ সেই একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা থেকে গড়ে উঠেছে চারটি প্রতিষ্ঠান”। আলিফ প্যাকেজিং এন্ড প্রিন্টিং। আলিফ ডেইরি ফার্ম। আলিফ গোট এন্ড পোল্ট্রি, ডাক ফার্ম। আলিফ ফিশারিজ এন্ড হ্যাচারি। ইতিমধ্যে মাগুরাতে শুরু হয়েছে আলিফ টাইলস্ ফ্যাক্টরির কাজ। ৪০ জনের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে সেইসব ফ্যাক্টরিগুলোতে।

উদ্যোক্তা সাবিনা আরও বলেন, ” আমার সেই ছোট মেয়েটি যাকে একসময় দুধ ও কাপড়ের যোগান দিতে পারিনি সেই তাজনিন আজ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ,এস,সি শেষ করে এ্যারোন্যাটিকাল ইঞ্জিঃ এ উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডার মেনিটোবা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার জন্য অনুমতি পেয়েছে”।

সফল উদ্যোক্তা সাবিনার ইচ্ছে গরিব দুঃখীদের জন্য সেবামূলক কাজ করা। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। যেনো তার মতো কষ্ট কোন মেয়ের জীবনে না আসে। প্রতিটি নারী যেন স্বাবলম্বী হয়। তারা নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করবে অনেকের।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here