উদ্যোক্তা সুমনা সুলতানা সাথী

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) নির্বাচিত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওতে নির্বাচিত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানকে “ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯” এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য ট্রেডবডিকে “ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯” প্রদান করা হয়।

এনপিও’র উদ্যোগে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর উৎপাদনশীলতা বহুপক্ষীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উৎপাদনশীলতাকে জাতীয় আন্দোলন ও শ্রেষ্ঠ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তনের ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও এনপিও পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন উপখাতে মোট ৩১ টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানকে এবং উৎপাদনশীলতা আন্দোলনকে বেগবান করার স্বীকৃতিস্বরূপ ২টি ট্রেড বডি ও অ্যাসোসিয়েশনকে দ্বিতীয়বারের মতো ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করা হয়।

ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ এ ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে এস আর হ্যান্ডিক্রাফটস প্রথম স্থান অধিকার করে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী সুমনা সুলতানা সাথী পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।

২০০২ সালে অনার্সে পড়াকালীন শেখার আগ্রহ থেকেই হাতের কাজে হাতেখড়ি সুমনা সুলতানা সাথীর। তিনি বলেন, “আমার ছোট ফুপু আড়ংয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। হাতের কাজে দক্ষতা থাকায় আমার মা কাজ করতেন সেখানে। মূলত মায়ের কাজ দেখেই সব ধরনের হাতের কাজ শিখি এবং কাজ করতে থাকি ফুপুর সঙ্গে”।

কাজ শিখছেন, এর মাঝেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সাথী। পড়াশোনা আর সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বেশ। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই উদ্যোক্তা হবেন, নিজেই নিজের ভাগ্য বদলাবেন। আড়ংয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে উদ্যোক্তা সহায়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিলেন এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বিসিক থেকে।

মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে পাবনার ভাংগুরায় ছোট্ট পরিসরেই এস.আর হ্যান্ডিক্রাফটের পথচলা শুরু করেন উদ্যোক্তা। শুরুটা সহজ ছিলো না। কাজের মান এবং দৃঢ় মনোবলে অল্প সময়েই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন উদ্যোক্তা। নিজের কারখানায় কাজের পাশাপাশি মনোনিবেশ করেন কর্মী তৈরিতে। এ লক্ষ্যে সাতক্ষীরা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী তৈরি করে কাজ আদায় করে নিতে থাকেন।

বর্তমানে ৩২ জন কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন উদ্যোক্তার কারখানায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন প্রায় ৪৫০ জন এবং অস্থায়ী কর্মী রয়েছে প্রায় ৩৫০ জন। এদের সিংহভাগই নারী। যাদের সঙ্গে উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন নিবীড় সম্পর্ক। প্রতি বছর প্রণোদনার উদ্দেশ্যে কাজের ভিত্তিতে কর্মীদের পুরস্কৃত করেন তিনি।

উদ্যোক্তার তৈরি কুশন কাভার, বেড কাভার, পর্দা, টেবিল ক্লথ, বাচ্চাদের পোশাক দেশব্যাপী তৈরি হচ্ছে। উদ্যোক্তার দুটি ফ্যাক্টরিতে এবং শোভা পাচ্ছে আড়ংয়ের বিভিন্ন শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেও বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন উদ্যোক্তা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুমনা সুলতানা সাথী বলেন, “আমার পণ্য নিয়ে বিশ্বদরবারে পৌঁছাতে চাই, বেকার নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে চাই”।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি সহায়তা পেলে নারী উদ্যোক্তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নারীদের দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দৃঢ়তা থেকেই সফলতা আসবে”।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here