শ্রেষ্ঠ ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দময়ী প্রমা

0
উদ্যোক্তা আনন্দময়ী প্রমা

অনন্য নারী উদ্যোক্তা আনন্দময়ী প্রমা। ফ্যাশনের লাইফস্টাইলে তিনি এনে দিয়েছেন নতুন মাত্রা ‘শুকসারী’। সৃষ্টি করেছেন তার অনন্য উদ্যোগ যেখানে রয়েছে দেশি পণ্যের নানা ধাঁচের নানা ডিজাইনের পোশাকের সমাহার। অল্প সময়ের মধ্যেই তার পোশাক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ন্যায্য দামে দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেলে সেরা ট্রেন্ডি পোশাকের সমাহার রয়েছে এ ব্র্যান্ডে।

বাবা পরমাণু শক্তি কমিশনে কর্মরত ছিলেন, এখন অবসরে। মা গৃহিণী। উদ্যোক্তারা তিন ভাইবোন, তিনি দ্বিতীয়। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া। তবে, জন্ম ও বেড়ে উঠা সাভারে। শান্তমারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। ডিজাইনার হিসেবে নামকরা বেশ কয়েক জায়গায় কাজও করেছেন আনন্দময়ী প্রমা।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই স্বাধীনচেতা। চাকরিতে একই ফ্রেমে বাঁধা পড়ে কোথাও যেন আমার নিজের সৃষ্টিশীল চিন্তাগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। চাকরি করা অবস্থায় বহুবার মনে হয়েছে রিজাইন করবো। চাকরি করতে ইচ্ছা করতো না। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেই। ঠিক সেই সময়টাতেই মনে হলো নিজেই কিছু করবো।’

২০১৭ সালের শেষের দিকে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে নিজেই কিছু স্কেচ করেন পোশাকের। যেহেতু ডিজাইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, সুতরাং এই কাজটি করতে বেগ পেতে হয়নি। পরবর্তীতে স্কেচ অনুযায়ী কিভাবে ফেব্রিকে নিয়ে আসা যায়, সেটা নিয়ে শেয়ার করলে তার ফ্রেন্ড মিথিলা আগ্রহী হন। তখন যাত্রা শুরু হয় দুই বন্ধুর প্রতিষ্ঠান ‘শুকসারী’র।

মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে স্টার্ট করেছিলেন। মূলত পোশাকের ডিজাইন নিয়েই কাজ করেন। উইমেন্স কালেকশন যেমন- শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ। বর্তমানে স্ক্রিনপ্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্ট এর প্রডাক্ট তৈরি করছেন সৃজনশীলতার সাথে।

ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ করেন দেশীয় বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে৷ পরে সেগুলো প্রিন্টিং কারখানায় চলে যায়। দু’ বন্ধুর নিজস্ব নকশা অনুযায়ী সেগুলো প্রিন্ট হয়। এখনও নিজস্ব কোন কারখানা নেই৷ তারা শুরু থেকেই ঢাকা শহরের মধ্যে বিভিন্ন কারখানার সাথে কাজ করেছেন। তবে, ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০ জন কর্মী সরাসরি উদ্যোক্তাদের সাথে যুক্ত আছেন। অনলাইন পেজ এবং প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শুকসারী’র মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করেন।

প্রমা বলেন: পেজে প্রচুর ক্রেতা আছেন যারা দেশের বাইরে থাকেন। তারা তাদের রিলেটিভস এর মাধ্যমে দেশের বাইরে প্রডাক্ট নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আমাদের পেমেন্ট করেন৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রেতা পেয়েছি আমরা। দেশের আনাচে কানাচে সব জায়গায় আমাদের শুকসারী’র ক্রেতা ছড়িয়ে আছে। সকল জেলা উপজেলা, গ্রাম পর্যায়ে পণ্য যায়।

নিয়মিত পণ্য উৎপাদন ছাড়াও ঈদ, পূজা, ফাল্গুন, বৈশাখের মতো উৎসবকে সামনে রেখে পণ্য উৎপাদন হয়। অকেশনালি ১২/১৫ টা নতুন নকশার পোশাক আসে। উৎসব অনুযায়ী প্রতিটা নকশায় ১০০ পিস করে থাকেন। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী সেগুলোর রিপ্রডাকশন করা হয়৷ মাসে পণ্য বিক্রি হয় ৫/৬ লাখ টাকার৷

প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বড় পরিসরে সকলের সামনে নিয়ে আসার ইচ্ছে আছে উদ্যোক্তার। নিজস্ব আউটলেট থাকবে, এমনটা স্বপ্ন দেখেন। একদিন বিশ্বের বড় শপিং মলগুলোতে নিজের ডিজাইনে তৈরি পণ্য শোভা পাবে, এমন স্বপ্নও দেখেন নবীন কিন্তু সফল উদ্যোক্তা প্রমা।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ: আমরা এখনও নতুন। তবু গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, প্রতিটা মুহূর্তেই বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়। ব্যবসায় মন্দ পরিস্থিতি আসে৷ খারাপ সময়টা থাকবেই। সেই সময়গুলোতে ভেঙ্গে না পড়ে সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে পার করতে হবে। সামনে অবশ্যই ভালো সময় আসবে। আর তাই পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য আবশ্যক।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here