চারদিকে যখন করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ, বাসায় থেকেই সব কাজ চলছে। তখন, শুরুতে বাসায় বসে অনলাইনে কাজ করতে ভালো লাগলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে যেন সময় কাটছিলো না। ফেসবুক কিংবা ফোনালাপেও যেন মন বসছে না! কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, তখন তার নতুন স্বপ্ন জাগলো উদ্যোক্তা হওয়ার।

পেশায় একজন শিক্ষক। জাতি গড়ার কারিগর যিনি তার কি ঘরে বসে অবহেলায় সময় কাটে? তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো ওরাও (শিক্ষার্থীরা) কিছু করতে চাইছে, যেখান থেকে অন্তত হাত খরচের টাকাটা চলে আসবে। শিক্ষক মনে করলেন, তার নিজেরও বেশ কিছু হাতের কাজের অভ্যাস ও ধারনা আছে। কোন কিছু সাতপাঁচ না ভেবেই শুরু করে দিলেন তার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। তিনি হলেন মফস্বল শহরে বসবাসকারী নরম কাঁদা মাটির সংস্পর্শে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক। যার নাম মোসাঃ উম্মেহানী, যিনি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা।

শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শ ছাড়া যার জীবন কাটেনা তিনি কি তাদের কথা না ভেবে পারেন? শিক্ষকতা পেশায় থাকার সুবাদে অনেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার সখ্যতা খুব সহজেই গড়ে উঠলো। প্রথমে গ্রাম বাংলার মেয়েদের নকশীকাঁথা ও বেবি নকশীকাঁথা করতে উৎসাহিত করলেন। তারপর চিন্তা করলেন তৃণমুল পর্যায়ের নারীদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। নিজের মনোবল শক্ত করার জন্যে ঢাকা গিয়ে ট্রেনিং নিলেন। আগে থেকে কাজগুলো জানা থাকলেও নতুন প্রজন্মকে শেখাতে নতুন করে ট্রেনিং নিলেন তিনি। কাজ শুরু করে দিলেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হলো “বাংলার ঐতিহ্য”। এই নামে একটি অনলাইন পেজও খুললেন উদ্যোক্তা উম্মেহানী।

খুব কম সময়ে বেশ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তা তার লক্ষ্যকে আরো দৃঢ় করে তুলছে। এই অল্প সময়ে তিনি বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের ঘরে বসে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তিনি সুতোর কাজ, ব্লক ও বাটিক প্রিন্ট, দর্জি বিজ্ঞান, হ্যান্ড পেইন্টসহ নানাবিধ কাজের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। উদ্যোক্তা উম্মেহানী বলেন, সবাই যে পড়াশোনা করে চাকরিই করবে এমনটা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, সেই সাথে সৃজনশীল চিন্তা। ইচ্ছে থাকলে এই প্রজন্মের বহুদূর এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু না।

পড়াশোনার পাশাপাশি চাইলেই নিজেকে একজন উদ্যোক্তা করে গড়ে তোলা বর্তমান প্রজন্মের জন্য খুবই সহজ যেখানে শুধুমাত্র কতগুলো সার্টিফিকেট দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব কষ্টকর। বরং সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে নিজের পরিচয় গঠন করা ও সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করা অনেক সহজ। উদ্যোক্তা বলেন, অলস সময় পার না করে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মুহুর্তে এগিয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ভবিষ্যতে পরিকল্পনা হচ্ছে তিনি দক্ষিণ বঙ্গের তৃণমূল নারীদের বেশি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, যাতে করে প্রতিটি নারী নিজের ঘরে বসে পণ্য নিয়ে কাজ করে বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে দিতে পারে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা