করোনাতেই শতরঞ্জি বিক্রি, করোনাতেই লাখপতি

0
উদ্যোক্তা- ইশরাত জাহান ও জাহিদ হাসান

স্বপ্নটা ছিল বিশ্ব ভ্রমণের, কিন্তু চাকরির গোনা টাকায় স্বপ্ন যখন ফিকে হতে চলছে, তখনই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে আবিষ্কারে নেশায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইশরাত জাহান ও জাহিদ হাসান।

এলএমএম পাশ করেও জড়াননি আইন পেশায়, স্বামী প্রকৌশলী জাহিদ হাসানকে নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্নে একদিন নিজেদেরকেও আবিষ্কার করলেন শতরঞ্জির সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।

মাশরুম চাষের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করলে মহামারি কোভিড-১৯ তা হতে দেয় নি এই দম্পতিকে। তবে বিশ্ব ভ্রমণের নেশায় মত্ত দু’জনকে মহামারিও আটকে রাখতে পারে নি। মাত্র ৩০ হাজায় টাকা পুঁজি নিয়ে রংপুর থেকে শতরঞ্জি এনে ফেসবুকে ‘দেশীয়’ নামে পেজ খুলে বিক্রি, যা কিনা প্রত্যাশার চাইতেও বেশি সাড়া মিলল।

কোভিডের মধ্যেও থেমে থাকেনি উদ্যোক্তার ব্যবসা, সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে ইশরাত জাহান উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আসলে আমাদের পেজের বয়স মাত্র ১১ মাস। গেল বছরের ৯ আগস্ট পেজের লাইক ৫০ হাজারের ওপরে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে আমাদের তিন জনের প্রচুর খাটতে হয়। আমাদের একজন সহায়ক আছে। পাশাপাশি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়িক বিষয়, বিপণন ইত্যাদি আমার স্বামী জাহিদ হাসান দেখেন। ‘

‘সম্প্রতি রংপুরের শতরঞ্জি জি আই (জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন) বা ভৌগলিক নিদর্শন হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। যা আমাদের কাছে গর্বের ব্যাপার। বাংলাদেশের হস্ত শিল্প রপ্তানি থেকে যা টাকা আসে তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে এই শতরঞ্জি থেকে।’

আপনাদের শতরঞ্জি কেন আলাদা ও বৈচিত্রপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যেক্তা ইশরাত বলেন, ‘দারুণ কালারফুল এই হ্যান্ড মেড শতরঞ্জির সুবিধাই হচ্ছে এটা বছরের পর বছর নতুন এর মতোই থাকে। ওয়াশ করলে রঙ যাবে না। সফট মখমল সুতার শতরঞ্জিতে বাচ্চারাও খেলতে পছন্দ করে।’

“কোয়ালিটির কথায় যদি আসি ১০ থেকে ১৫ বছর রাফ ইউজ করা যাবে। ওয়াশেবল,কালার গ্যারান্টিড মখমল সুতার এই ম্যাট গুলি ঘরে রাখলে পুরো ঘরটার লুক চেঞ্জ হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ হিট প্রুফ ম্যাটেরিয়াল এ তৈরী করা হয়। ভারী কটন, জড়ি সুতার হ্যান্ড মেড কাজের সাথে থাকে শক্তিশালী বুনন।”

হোম ডেকোরে শতরঞ্জি কতোটা ঘরের শোভা বর্ধন করে জানতে চাইলে ইশরাত বলেন, ‘ঘরের শোভা বর্ধনে কয়েকটি সাইজের শতরঞ্জি ফ্লোর ম্যাট ই যথেষ্ট। আমাদের নানান কালার আছে।পর্দা কিংবা সোফার কভারের সাথে কালার ম্যাচ করে পছন্দ সই নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বড় সাইজ টা ঘরের মাঝে রাখা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, “আমরা নয়’শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত শতরঞ্জি বিক্রি করি। শতরঞ্জি হাতে বানানো হয়। যেই ম্যাট ডিজাইনে সময় বেশি লাগে সেই ম্যাট এর দাম বেড়ে যায়। কারণ ওয়ার্কার খরচ।

শতরঞ্জির সবচেয়ে হেভি একটা ডিজাইন হলো জিগ জ্যাগ ডিজাইন। নরমাল যে কোনো ম্যাট থেকে ওই ম্যাট বানাইতে সময় বেশি লাগে।”

ইশরাত জানালেন শতরঞ্জি তাদের সিগনেচার প্রোডাক্ট। এছাড়াও আমরা দেশীয় উপাদানে তৈরি ব্যাগ, ঘড়ি, মনিপুরী শাড়ি, ব্যাগ ইত্যাদি বিক্রি করে থাকি

সফল উদ্যোক্তা হবার পেছনের অনুপ্রেরণা কী জানতে চাইলে ইশরাত বলেন, ‘২০১৯ সালে সিকিম ঘুরতে যাবার পর অর্থ সঙ্কটে বেশ কয়েকটা জায়গা ঘুরতে পারি নাই। তখনই জেদ চাপে। তাইতো জীবনের শখ পূরণ করার নেশাই উদ্যোক্তা হিসেবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।’

গ্রাহকের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জননতে চাইলে ইশরাত বলেন, ‘এখন প্রতিমাসে ছয় থেকে সাত লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছি। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় আমাদের পণ্য যাচ্ছে। দেশের বাহিরেও যাচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এখনও কাজ শুরু করিনি। আমাদের দেশিয় লিমিটেড ডট কমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কেউ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে আমাদের পণ্য অর্ডার করতে পারছেন।’

নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি কি বার্তা দিতে চান জানতে চাইলে জাহিদ হাসানের স্পষ্ট জবাব: কাজের প্রতি কমিটমেন্ট সবচেয়ে বেশি জরুরি। সেটা যে কাজই হোক না কেন। পাশাপাশি আমি কি করবো তার সঠিক গাইডলাইন থাকতে হবে।

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here