উদ্যোক্তা- সোনিয়া আখতার

সভ্যতা বিকাশের পর শাড়িই বাঙালি নারীর আদি ও অনন্য পোশাক। ধর্মীয় মতামত, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, আন্তর্জাতিক পোশাক সংস্কৃতির আগ্রাসন কোনোটিই শাড়িকে নিজস্ব অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। বাংলায় ফ্যাশনের ক্রমবিকাশে অন্যান্য সব পোশাকই এসেছে শাড়ির সহ-পোশাক হিসেবে, বিকল্প হিসেবে নয়। ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে পোশাক-আশাক পরিবর্তনেরও কিছু যোগসূত্র আছে।

বাংলায় বিভিন্ন রাজবংশের রাজত্ব স্থাপন, একাধিক ধর্মের আবির্ভাব, মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়, ব্রিটিশ শাসন ইত্যাদি রাজনৈতিক পরিক্রমা নানা মাত্রার প্রভাব ফেলেছে বাঙালি সংস্কৃতি ও জীবনচর্চায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান ঘটেছে লক্ষণীয় মাত্রায়। কিন্তু পোশাক হিসেবে শাড়ি কোনো পরিবর্তনের স্র্র্র্র্রোতেই ভেসে যায়নি। বঙ্গ ভঙ্গ হয়েছে, পূর্ব বাংলা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান, অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশ।

এত পরিক্রমার পরেও বাঙালি নারীর পোশাক হিসেবে শাড়ি ধরেছে সমান মর্যাদা আর ঐতিহ্য। শাড়ি পরার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে কেবল।সাটি বা সারঙ্গ শাড়ির আদি নাম। প্রাচীনকালে নারীরা যে নিবাস পরতেন, সেটিই শাড়ির আদিরূপ।

জিনস-টপে যতই হোক না আধুনিকা, বাঙালি নারী মানেই পরনে শাড়ি। সত্যি কথা বলতে একজন মেয়েকে শাড়িতে যতটা মোহনীয় সুন্দর লাগে, হয়তো অন্য পোশাকে ততটা লাগে না। আজ আমরা চোখ রাখবো এমনই এক উদ্যোক্তার দিকে যার শাড়ির মোহময়ী রূপ পাগল করেছে অনুরাগীদের। আজকের উদ্যোক্তা বার্তায় আমরা এমন একজন নারী উদ্যোক্তা কে নিয়ে কথা বলবো যিনি শাড়িতে শাশ্বত বাঙালি নারী- রং তুলি আপু।

যিনি নিজের থেকেও বেশি পছন্দ করেন তাঁর কাজকে পরিচয় করিয়ে দিতে। কথা হচ্ছিলো সোনিয়া আখতার এর সাথে, রং তুলির স্বত্বাধিকারী। উদ্যোক্তার ইচ্ছা Soniya’s Rong Tuli নাম দেশের সবার কাছে পরিচিত হোক। অনেকেই তাকে রং তুলি আপু বলেও ডাকে।

“কাজটা খুব চ্যালেন্জিং ছিল। এই কাজটা সম্পূর্ণ আমি আমার নিজের উদ্যোগে করেছি। ছোট বেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল চাকুরি করার কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম, চাকুরি মানেই প্রতিনিয়ত একটা নিয়মের মধ্যেই চলতে হবে আর নিজেকে নিয়ে ওই ভাবে ভাবার সময় দিতে পারব না। তাই নিজ থেকেই কিছু করার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস অনেকদিন থেকেই চিন্তা ঘুরপাঁক খাচ্ছিলো। আর আমি অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এই কাজ করতে-কথা গুলো বলছিলেন উদ্যোক্তা সোনিয়া আখতার”।

খুব ছোট বেলা থেকেই আঁকা আকিঁর অভ্যাস ছিল সোনিয়ার। যে কোনো কাজের শুরুতেই অনেক বেগ পেতে হয়। সোনিয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়েছে। সোনিয়ার কাপড়ের ফেব্রিক সংগ্রহ করতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। নারী হিসেবে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছিল। অনেক দূর পাইকারি মার্কেট থেকে উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় ফেব্রিক সহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে হয়েছিল।

এই কাজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সোনিয়ার ফ্যামিলির সাপোর্ট ছিল অনেক প্রশংসনীয়। সোনিয়া যখন প্রথম কাজ শুরু করেন, তখন তাঁর ফ্যামিলি-ই তাকে কাজটা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল।

সোনিয়া মূলত: হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি, পাঞ্জাবি, বেবি ড্রেস, কামিজ, ওড়না আর ফতুয়া তৈরি করে থাকেন। অনেক গ্রাহক সোনিয়ার কাছে অনুরূপ ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবির অর্ডার করে থাকেন। গ্রাহকের এই চাহিদাকে কাপল সেট বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ফ্যামিলি কম্বো সেটও রং তুলি থেকে গ্রাহকের জন্য তৈরী করা হয়ে থাকে।

সোনিয়া তার কাজের মাধ্যম হিসেবে দেশীয় কাপড়ে বাঙ্গালিয়ানায় কাজ গুলো করতে পছন্দ করেন। যেমন- আমাদের দেশীয় ফুল, পাখি আর প্রাকৃতিক দৃশ্য পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে দেশীয় কাপড়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।উদ্যোক্তার গ্রাহকের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী রং তুলি থেকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

উদ্যোক্তা তাঁর কাজে সবসময় কাজ গুলো পূর্বের কোন কাজের সাথে মিল রেখে তৈরি করেন না। নিত্য নতুন ভিন্নধর্মী চিন্তা ও চেতনা থেকেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। উদ্যোক্তার চিন্তা ধারায় বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন গুলো চলে আসে প্রতিনিয়ত।আর এই ডিজাইন গুলোই ফেব্রিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে ।

সোনিয়া প্রত্যেকটা ডিজাইন তাঁর নিজস্ব চিন্তা ধারা থেকে করে থাকে। যা গ্রাহকের কাছে প্রত্যেকটা ডিজাইন ইউনিক ও স্বতন্ত্র মনে হয়। সোনিয়া তাঁর কাজের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে Soniya’s Rong Tuli নামানুসারে পরিচিতি পেতে চান।

ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা তাঁর প্রতিষ্ঠানকে এমন এক জায়গায় দেখতে চান, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা কিনা তাঁর কাজ ও সেবা সবার মাঝে পৌঁছে দিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে যেনো সুনাম অর্জন করতে পারে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here