শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাঁধা হতে পারেনি উদ্যোক্তা মৌমিতা রয়ের সফলতার যাত্রায়

0
উদ্যোক্তা মৌমিতা রয়

শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজকে সফল উদ্যোক্তা মৌমিতা রয়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন যশোরের মেয়ে মৌমিতা রয়। মাত্র দুই বছর বয়সেই তার বাবা মা এর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর মায়ের কাছে বড় হতে থাকেন মৌমিতা রয়। মা ও মামাদের সহযোগীতায় তাদের সংসার এবং মৌমিতার পড়াশোনা চলতো। এছাড়াও পাশে ছিলো আত্মীয়-স্বজনেরা। মৌমিতা এবং তার মায়ের মনের জোর হিসেবে ছায়ার মতো সবসময় যে ছিলেন তিনি হলেন মৌমিতার দাদু।

পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো ছিলেন বলে কখনোই পড়াশোনা ছেড়ে দেননি মৌমিতা। সুযোগ মিলেছিলো এম এম কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করারও। তবে সেটা চালিয়ে যেতে পারেননি বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। বর্তমানে ডিগ্রি কোর্স করছেন এবং রয়েছেন থার্ড ইয়ারে। পড়াশোনা চলাকালীনই বিয়ে হয়ে যায় পৃযুশ কর্মকারের সাথে এবং দুইটি ফুটফুটে সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই সংসার করছেন মৌমিতা। তবে নিজে থেকে কিছু একটা করার তাগিদ তাকে সবসময় তাড়া করতো। হতে চেয়েছিলেন এয়ার হোস্টেজ অথবা শিক্ষক। কিন্তু শারীরিক দূর্বলতা আর সংসারের চাপে সেটা আর হয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই বলে থেমে থাকেন নি মৌমিতা রয়। বরং হয়ে উঠেছেন একজন উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা হবার পরিকল্পনায় স্বামী পৃযুশ কর্মকারের থেকে মাত্র ২৫০ টাকা আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে সব মিলিয়ে ২,৫০০ টাকার পণ্য কিনে শুরু করেন ব্লক, বাটিকের কাজ। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন স্বপ্ন উড়ান। মূলত ব্লক, বাটিকের কাজকে কেন্দ্র করেই উদ্যোক্তা পান বিপুল পরিমাণ সাড়া। স্বল্প পরিমান মূলধন নিয়ে শুরু করলেও মাত্র এক বছরের পরিশ্রমে বর্তমানে প্রতিমাসে তার আয় প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা। তিনি কাজ করছেন অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই। বিভিন্ন শোরুমে উদ্যোক্তা মৌমিতার ব্লক, বাটিকের ব্যাপক চাহিদা। এই পুরো যাত্রায় সার্বক্ষণিক তার পাশে পেয়েছেন স্বামী ও মা কে এছাড়াও সার্বক্ষনিক মনোবল দিয়েছেন তার এক বন্ধু। এবারের পূজোয় সবাইকে নিজের টাকায় উপহার দিতে পেরে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন বলে জানান উদ্যোক্তা মৌমিতা রয়।

উদ্যোক্তা বার্তা কথা প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চায় এয়ার হোস্টেজ বা শিক্ষক হতে না পারার অপূর্ণতা কখনো খারাপ লাগে কিনা? উত্তরে মৌমিতা জানান প্রথম প্রথম একটু শুন্যতা কাজ করলেও ধীরে ধীরে ব্যবসা তার মনোযোগ কেড়ে নেয়। তিনি খুঁজে পান নিজের স্বাচ্ছন্দ্যমতো কাজ করার আনন্দ। তিনি আরো জানান, হয়তো চাকরি করলে কাজে এতোটা স্বাধীনতা সে পেতো না। আবার শারীরিক দূর্বলতা নিয়ে অনেক বেশি কাজের চাপও সে হয়তো নিতে পারতো না। সব মিলিয়ে এখন তার ধ্যান জ্ঞান জুড়ে রয়েছে তার গড়ে তোলা ব্লক, বাটিকের ব্যবসা। তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে নিজের একটা শোরুম খোলা এবং সাথে বেকার কিছু মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের এই সফল উদ্যোক্তা মৌমিতা রয় বলেন, চলার পথে যতো বাঁধাই আসুক স্বপ্ন পূরণের জন্য হাল ধরে থাকতে হবে। অনবরত লেগে থাকা এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখাই সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করেন উদ্যোক্তা মৌমিতা রয়।

মার্জিয়া মৌ
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here