শুধুমাত্র দেশি পণ্যের সমাহার। তাই এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা এসএমই পণ্যমেলা প্রাঙ্গণ যেন সারা বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের এক বাজার। বৈচিত্র্য এবং সৃজনশীল পণ্যের এ মেলা যেমন ক্রেতাদের নতুন অনেক কিছু দিয়েছে, তেমনি উদ্যোক্তারাও পেয়েছেন নতুন সম্ভাবনা।
মেলা শেষ হওয়ার আগে শেষ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসএমই পণ্যমেলায় দেখা গেলো অনেক ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম। ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন, প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও সেরে নিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখা যায়। বান্দরবান থেকে লাল চাল, কলা, হলুদ, পেঁপে, আনারস, তেল, মধু, গুঁড় নিয়ে আসা অর্গানিক শস্য ভাণ্ডার অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বান্দরবনের কাজুবাদাম কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে তার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারছেন হল ডি এর কিষাণঘর এগ্রো স্টল থেকে। নিজস্ব বাগানের কাজুবাদাম নিয়ে মেলায় এসেছেন তারা। এছাড়াও সেখানে রয়েছে কফি বিন। কফি বীজ থেকে খাবার উপযোগী কফি প্রদর্শন করা হচ্ছে স্টলটিতে।
কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচির আচার, ক্যাপসিকামের আচার, জলপাই আচার, রসুনের আচার, মাশরুমের বাখরখানি, নাড়ু, হোমমেড চিপস, পাপড়, যবের ছাতু, ডালভাজাসহ বাহারি আইটেম পাওয়া যাচ্ছে উম্মে হামিমার আল্ বাক্বী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল স্টলটিতে।
তিনি বলেন, ‘সকাল সকাল বাকরখানি প্যাকেটজাত করে মেলায় নিয়ে এসেছি। এছাড়াও রয়েছে আমার হোমমেড চিপস, সেটাও সকাল সকাল ভেজে মেলায় নিয়ে আসা। মেলায় চিপসের চাহিদা অনেক। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ইনোভেশন করি আমরা।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে এসেছেন তৌকির আহমেদ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম আহমেদ জামদানি। পূর্বপুরুষের ব্যবসায় হাল ধরেছেন তিনি। জামদানি শাড়ি যেমন- জুঁইফুল, করলারপাড়, মদনপাড়সহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি আছে তার কাছে। দাম পড়বে চার হাজার থেকে ৬৫ হাজারের মধ্যে৷
উদ্যোক্তা তৌকির বলেন: মূলত মেলায় এসেছি প্রোডাক্ট প্রদর্শনী করার জন্য। জামদানি নিয়ে অনেকের অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আমি তাদের সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই মেলা অংশ নিয়েছি।
জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টলটিতে গেলে দেখা মিলবে কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক মেশিনারিজ। যার মধ্যে রয়েছে ডালের খোঁসা ছাড়ানোর মেশিন, ফুট পাম্প স্প্রেয়ার, অয়েল এক্সপেলার, নিড়ানি যন্ত্রসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম।
এছাড়াও কম্পিউটারের ব্যবহৃত ইনসাইড ডিভাইস নিয়ে মেলায় এসেছেন ‘কম্পিউটার ইনসাইড’ এর স্বত্ত্বাধিকারী সবুজ তালুকদার।
দেশীয়ভাবে প্রস্তুত খেলনা নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় রয়েছে আমান প্লাস্টিক টয়েজ ইন্ডাস্ট্রিজ। ছোট্ট সোনামণিদের জন্য রঙ বেরঙের খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানি এটি।
এক কথায় বলা যায় এসএমই পণ্যমেলায় বীজ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক পণ্যের পাশাপাশি শৌখিন পণ্যতো রয়েছেই, আছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মেশিনারিজ থেকে শুরু করে মেডিকেল ও কম্পিউটার ডিভাইস পর্যন্ত।
প্রতিটি স্টলে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৪ নভেম্বর শুরু হয় ১০ম জাতীয় এসএমএমই পণ্যমেলা। দেশী পণ্য নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে বড় আয়োজন এটি। মেলায় এবার ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৫১টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ১৩০টি পোশাক শিল্পের স্টল। আরো রয়েছে চামড়াজাত পণ্য, পাটপণ্য, খাদ্য ও কৃষিপণ্য, হস্ত ও কারুশিল্প, তথ্য প্রযুক্তি ও সেবা এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের পণ্য।
ছয়টি হলে ক্যাটাগরির ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে স্টলগুলো।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এসএমই পণ্যমেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উম্মুক্ত।
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা