লাইভ, কমিটমেন্ট, কাপড় কেনা- সব করে তুললো এক মা’কে উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা রুমা রহমান ও তার মেয়ে

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ধর্মপ্রাণ নারীদের ফ্যাশনেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। পাওয়া যাচ্ছে নতুন ধরনের হিজাব ও বোরকার কালেকশন। নিজের ডিজাইন আর কঠোর পরিশ্রমে এরকম একটি কালেকশনের নাম “রোজ টাচ ওয়ার্ল্ড”। শুরুর সময় উদ্যোগ ছোট হলেও স্বপ্ন দেখেছিলেন বড়। সেই লক্ষ্যে দৃড় শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা রুমা রহমান।

বাবা ইঞ্জিনিয়ার ও মা গৃহিনী। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর। বড় হয়েছেন ঢাকা শহরে। এইচএসসি শেষ করার পর বিয়ের পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। কিন্তু, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যভাবে।

উদ্যোক্তা বার্তাকে রুমা রহমান বলেন: দুই বছর ধরে আমি উদ্যোক্তা। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, খুবই ছোট ছিলাম, তখন থেকেই আমার নিজের হাতে বানানো কিছু জিনিস স্কুলে নিয়ে বিক্রি করতাম। সব সময় কিছু না কিছু করার চেষ্টা করতাম। কিছু করার ইচ্ছের কথাগুলো সবসময় ঘরে সবার সাথে শেয়ার করতাম। আমি কিছু করতে চাই ও কিছু হতে চাই। কিন্তু সংসারে সময় দিয়ে কখনোই কিছু করার করতে পারছিলাম না। আমার কথাগুলো আমার বড় মেয়ে খুব মনযোগ দিয়ে সবসময় শুনতো। এ ব্যাপারে আমার হাসব্যান্ডও সব সময় সহযোগিতা করতে চাইতো। এই বয়সে এসে যখন আমি আবার কিছু করার চেষ্টা করা শুরু করলাম সেটা হলো আমার বড় মেয়ে রোজমিন রহমানের উৎসাহ পেয়ে।

বড় মেয়ের উৎসাহ পেয়ে প্রথমে কিছু গেঞ্জি কিনে বিক্রি শুরু করেন তিনি। বেশ ভালোই সেল হচ্ছিল। সেই সময় একটা ছোটখাটো পরিচিতি পেলেন। তখন তিনি প্রোডাক্ট ঘরে রেখে বিক্রি করতেন। এসব দেখে মেয়ে খুব উৎসাহ নিয়ে বলল- মা চলো তোমাকে একটা ফেসবুক পেজ খুলে দেই! একটা পেজ খুলে দেয়ার পর সে নিজেই লাইভ করে একা একা গেন্জিগুলো বিক্রি শুরু করলো। রুমা তখন থাকতেন ক্যামেরার আড়ালে। এভাবে শুরু হলো তার নতুন পরিচয় ও নতুন স্বপ্ন।

পরে মেয়ের সাথে রুমাও লাইভ শুরু করেন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এরপর দু’জন পরামর্শ করে কাপড় কিনে নিজেদের ডিজাইনে বোরকা-হিজাব বিক্রি শুরু করেন। এভাবে বেশ চলতে চলতে। উদ্যোক্তার মেয়ে তাকে বিভিন্ন মেলার সম্পর্কে জানান। রুমাও রেজিস্ট্রেশন করে মেলায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। এতে তার এবং ব্যবসার পরিচিতি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, “প্রথম মেলায় যখন অনেকেই সেল করতে পারছিলেন না, তখন আমার কাস্টমারদের ভিড়ে আমি পরিচিতদের সময় দিতে পারছিলাম না। সেখানে যাওয়ার পর আমি আমার স্বপ্নকে হয়তো কিছুটা হলেও স্পর্শ করতে পেরেছি। স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য আমার মেয়ে ও হাসব্যান্ড এবং পুরো ফ্যামিলি সাপোর্ট দিয়েছে।”

উদ্যোক্তা রুমা রহমান ভাইয়ের বউ এর কাছ থেকে মাত্র ১০,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন। বোরকা, হিজাব, কাফতান ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন তিনি। কাপড় কিনে নিজেই ডিজাইন করে অন্যের কারখানার থেকে তৈরি করিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। অনলাইন পেজ Rose Touch World বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় পণ্য পাঠায়। এর মধ্যে আছে ভোলা, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জর, চাঁদপুর ও বরিশাল। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। মাসে ১০০ থেকে ৫০০ পিস বিক্রি হয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রুমা বলে: শুধু আমাদের পণ্যের একটা শো-রুম করার পরিকল্পনা করে রেখেছি। এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে সৌখিনতার সব কিছু সব চেয়ে কমদামে পাওয়া যাবে। মানুষ যেন প্রতিদিনের চাহিদা ও শখ খুব কম খরচেই পূরণ করতে পারেন সেটাই আমার প্রত্যাশা।

মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here