রাজবাড়ী জেলা সদরের ভবদিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবেশবান্ধব এই কারখানায় পাট, কচুরিপানা, হোগলা পাতা ও খড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় একশ রকমের পণ্য। ব্যাপক চাহিদা থাকায় সেগুলো রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ২৬টি দেশে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ পিস পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়, যার আর্থিক মূল্য ২ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই হাজার শ্রমিক হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল; যাদের অধিকাংশই নারী। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি সব মিলিয়ে ভালো প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।
ভবদিয়া গ্রামের ‘গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টস’ কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে পাট, কচুরিপানা, হোগলা পাতা ও খড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নার্সারি পট, ফ্লোর ম্যাট, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুড়ি, টিফিন বক্স, পেট হাউস, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ট্রে, ফুল ঝুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিক নারী। এক সময় তাদের দিন কেটেছে চরম অর্থকষ্টে। এখানে নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের অনেকেরই ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। এ ছাড়া কাজ করছেন প্রতিবন্ধী ও বিধবারাও।
নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষ শ্রমিকও কাজ করছেন। কেউ পণ্য তৈরি করছেন, কেউ তৈরি করা পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। আবার কেউ কেউ বিদেশে পাঠাতে পণ্য প্যাকেটজাত করছেন।
কারখানার কর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের আগে আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। বাড়িতে বেকার ঘুরে হাঁস-মুরগি পালন করতাম। এই ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পরে এখানে কাজ করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়েছে আমার। মেয়েদের মাদরাসায় পড়াতে পারছি। আয় রোজগার ভালো হচ্ছে। আমি ও আমার স্বামী দুজনে মিলে এখানে কাজ করে কিছু টাকা জমাতেও পারছি।
কারখানার আরেক কর্মী নাজমা আক্তার বলেন, “আগে সংসারের কাজ শেষে বাড়িতে বসে থাকতাম। স্বামীর উপার্জনের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমত দিতে পারতাম না। তিন বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছি। সংসারের অভাব দূর হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও সময়মত দিতে পারছি।”
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সালে সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কর্ণধার হাকিম আলী সর্দারের নেতৃত্বে আজ এ পর্যায়ে এসেছে। ২০১৫ সালে আমরা ঢাকার বাইরে রাজবাড়ীতে মিলটি করার চিন্তা করি। সেই ভাবনা থেকে এক একর জায়গায় এই কারখানাটি চালু করা হয়। আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট, হোগলা পাতা, ধানের খর, কচুরিপানা সংগ্রহ করি।
তিনি আরও বলেন, “কারখানাটিতে শতাধিক ধরনের পাটজাত পণ্য তৈরি করা হয়। এসব পণ্য নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব, জাপান, হংকং, মালয়েশিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ ২৬টি দেশে রপ্তানি করা হয়।”
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টসের সহকারী সাধারণ ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন সুজন জানান, জেলা সদরের ভবদিয়া গ্রামের গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট প্রতিষ্ঠানে পাট, হোগলা পাতা,খড় ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পরিবেশবান্ধব পণ্য। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসব কাঁচামাল আমলা সংগ্রহ করি। ব্যাপক চাহিদা থাকায় উৎপাদিত এসব পণ্য বায়ারদের মাধ্যমে পৃথিবীর ২৬টি দেশে রপ্তানি হয়। গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ পিস পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য ২ কোটি টাকার বেশি। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম আরো এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস জানান, রাজবাড়ী জেলায় ভবদিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় পাট, হোগলা পাতা, কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার্য হস্ত পণ্য তৈরি হচ্ছে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। স্থানীয় পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিসিক জেলা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব কারখানা পরিদর্শন করে উদ্যোক্তাদের নানাবিধ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো উদ্যোক্তা যদি আমাদের আছে সহায়তা চান তাহলে তাকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ সহায়তাসহ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করব।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা