বান্দরবানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ কোমর তাঁতের পোশাক

0

দিনকে দিন কদর বাড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত বস্ত্রের। বৈচিত্র্যময় ও রুচিশীল ডিজাইন এবং টেকসই, সুতি কাপড় পরতে আরামদায়ক হওয়ায় বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে ওই পোশাক তৈরির হিড়িক পড়েছে বান্দরবান জেলায়।

কোমর তাঁতের কাপড় দিয়ে অনেকে তৈরি করছেন সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট, গায়ের শাল, বেডশিট, শোপিস, মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, কুশনসহ হরেক রকমের পণ্য। এগুলো এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি স্থানীয় বাঙালি এবং ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরাও কিনছেন। এমনকি পাহাড়ে ভ্রমণে আসা বিদেশি পর্যটকরাও কিনে নেন তাঁতের পোশাক।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বম,  ত্রিপুরা,  তঞ্চঙ্গ্যা,  চাকমা,  মুরুং,  খেয়াং,  খুমী, লুসাই এবং মারমাসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ–জনগোষ্ঠীর নারীরা তাঁতের পোশাক তৈরিতে পারদর্শী। পাহাড়ে চাষ করা তুলা থেকে সুতা তৈরি করে কোমর তাঁতে কাপড় বুনেন পাহাড়ের নারীরা। তাঁতে বোনা কাপড়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের পোশাক যা বর্তমানে তরুণ–তরুণীদের ফ্যাশনে পরিণত হচ্ছে। কোমর তাঁতে বোনা কাপড় বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন পাহাড়ের নারীরা।

পাহাড়ের প্রতিটি নারীই কাপড় বুনতে পারদর্শী। সকলেই পরিবারের কাছ থেকেই শিখেছেন কোমর বোনার কাজ। কৃষি এবং ঘরের কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে পাহাড়ের নারীরা কাপড় বুনে
পোশাক তৈরি করেন। একটা সময় ছিল পাহাড়ের নারীরা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য কাপড় বুনতেন। কিন্তু এখন সংসারে আয় বাড়াতে উপার্জনের জন্যও কাপড় বুনছেন। কাপড় বিক্রি করে স্বচ্ছলতা এসেছে অনেক পরিবারে। অনেকের সংসার চলছে এখন তাঁতে বোনা কাপড় বিক্রি করে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাহাড়ের নারীদের তৈরি করা কোমর তাঁতের কাপড় পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে সংগ্রহ করে কাপড়ের ব্যবসা করেন। মূলত স্থানীয়ভাবে কোমর তাঁতের পোশাকে প্রধান ক্রেতা হচ্ছেন পর্যটকেরা। কিন্তু নানা কারণে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় বিক্রিও একদম কমে গেছে। তবে জেলার বাইরে ঢাকায় পাইকারী দামেও কাপড় সরবরাহের কাজ করেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা কুটির শিল্প সংস্থার মতে, বান্দরবান জেলায় প্রায় বিশ হাজারের বেশি পাহাড়ি নারী কোমর তাঁতে কাপড় তৈরির (বেনার) সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে তৈরি করছেন থামি (পরার কাপড়), গামছা,
কম্বল, রুমাল, গায়ের শাল, টুপি, উড়না, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন রকমারী পোশাক।

পাহাড়ী নারীদের একটি কম্বল বুনতে সময় লাগে এক থেকে তিন দিন। জেলায়
ঘরে ঘরে পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে কাপড় বুনলেও বান্দরবান জেলায় এখনো পর্যন্ত গড়ে উঠেনি কোন ধরনের বিসিক শিল্প কারখানা। শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় বান্দরবানের তাঁত শিল্প অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্বল্প পুঁজিতে কোমর তাঁতে কাপড় বোনা সম্ভব বলে পাহাড়ি নারীরা কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে কোমর তাঁতে কাপড় তৈরি করে সংসারে আয় বাড়াচ্ছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোমর তাঁত শিল্প পাহাড়ি নারীদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।

পাহাড়ের তাঁতে বোনা এসব কাপড় রপ্তানি হচ্ছে মিয়ানমার–ভারতসহ বেশকিছু দেশেও। স্থায়ীভাবে বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান শৈলপ্রপাত, নীলাচল,
চিম্বুক পর্যটন স্পটে পাহাড়ী নারীরা নিজ উদ্যোগে অস্থায়ী বাজার গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও স্থানীয় পর্যটন মার্কেটগুলোতেও বিক্রি হচেছ তাঁতের পোশাক।

বান্দরবানের বালাঘাটা তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টারের কর্মকর্তা মিল্টন আলী বলেন, পাহাড়ের নব্বই শতাংশ নারীই কোমর তাঁতে কাপড় বুনতে পারেন। কোমর তাঁতে পারদর্শী ৬১০ জন নারীকে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে জনবল সংকটে কোমর তাঁতে সম্পৃক্তদের সঠিকভাবে সরকারি সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here