‘রাঙামাটির দেশে’ রিমুর কাজুবাদামে সফলতা

0
উদ্যোক্তা - জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু

নীল জলরাশির সাথে সবুজের সমারোহ আর সারি সারি পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটি। পাহাড়ে চাষাবাদে জুমের চাল, নানা রকম সবজির সাথে সম্প্রতি সময়ে সেখানকার স্থানীয়রা কাজুবাদাম চাষে সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে ফেসবুকের কল্যাণে পাহাড়ের তরুণেরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। তাদের উদ্যোগে রাজধানীতে ঘরে বসেই আমরা পাহাড়ি নানা ধরণের সবজি খেতে পারছি।

উদ্যোক্তা বার্তা‘র পাঠকদের জন্য আজ আমরা এমন একজনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানবো, যিনি কিনা কাজুবাদাম চাষ করে নয়, শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাত করেই হয়েছেন লাখপতি।

বলছিলাম রাঙামাটির মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিমুর কথা। হাতে স্মার্টফোন থাকার সুবাদে রিমু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন। ওমেন্স অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম ‘উই’ গ্রুপটিতে তিনি যুক্ত হন এবং সেখানকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার নিসা এবং অন্যান্য যে সকল উদ্যোক্তা আছেন তাদের বিভিন্ন পোস্ট তিনি পড়তে শুরু করেন। অনুপ্রাণিত হন সে গ্রুপের সদস্যদের লেখাগুলো পড়ে। এভাবে আস্তে আস্তে তিনি ভাবতে শুরু করলেন, ‘আমিও উদ্যোক্তা হবো। নিজে অর্জন করবো পরিবারের পাশে দাঁড়াবো’।

২০২০ সালের শেষ দিকে মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু তার উদ্যোগটি শুরু করলেন। প্রথম পণ্য হিসেবে বাছাই করলেন কাজুবাদাম।

এতো কিছু রেখে কেন কাজু বাদাম বাছাই, জানতে চাইলে রিমু উদ্যোক্তা বার্তা‘কে বলেন, ‘দেশে বর্তমান সময়ে কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা। চাহিদার তুলনায় দেশে অনেক কম চাষ হয়। আমদানির উপর বেশি নির্ভরশীল হতে হয়। অন্যদিকে আমাদের রাঙামাটিতে কাজুবাদাম চাষ হচ্ছে। এটি রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর মধ্যে একটি। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমি প্রথম পণ্য হিসেবে কাজুবাদাম বাছাই করি’।

‘‘এছাড়াও এ ফসলের যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুণও, যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ চমকপ্রদ। কাজুবাদাম হৃৎপিন্ডের জন্য শক্তিদায়ক, ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারী, হজমে সহায়ক, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়, রক্ত শূন্যতায় কাজ দেয়, হাঁড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেসার কমায়, অবসাদ দূর করে ভালো ঘুম আনয়নে সাহায্য করে।’’

রিমু বলছিলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় অনেক কাজুবাদামের চাষ হয় এবং বাসার পাশেই বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে যার ফলে আমি খুব সহজে কাজু বাদাম সংগ্রহ করতে পারি। সেগুলো বাসায় এনে সিদ্ধ করা, ভাজা, প্যাকেজিং করা সবটা নিজের হাতে আমি করি এবং পণ্যগুলো ক্রেতাদের পৌঁছে দেওয়ার কাজে আমার ভাই এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা সহযোগিতা করে।’’

উই গ্রুপেই প্রথম পণ্য বিক্রি করে সে আনন্দঘন মুহূর্ত স্মরণ করে আনন্দ অশ্রুতে চোখ ভেজান রিমু। বর্তমানে রিমু ফেসবুকে রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী কাজুবাদাম নামে একটি পেজ চালু করেন। পরে কাজুবাদামের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, মারমা থামি এবং বিনি চাল নিয়ে কাজ শুরু করেন।

রাঙামাটির মো. আবুল কালাম ও বিউটি বেগমের সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু পণ্যের গুনগত মানের ঠিক রেখে ব্যবসা পরিচালিত করছে। পাশাপাশি মহামারিকালেও মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে এক হাজার টাকার পুঁজি থেকে মূলধন চার লাখ টাকায় পৌঁছে গেছে।

রিমু জানান, দেশের বাইরে তিনি পণ্য পাঠিয়েছেন এক ক্রেতার মাধ্যমে এবং দেশের ভেতরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ আরো অনেক স্থানে তার পণ্য নিয়মিত যাচ্ছে।

দেশের প্রতিটি প্রান্তে তিনি নির্ভেজাল পণ্য পৌঁছে দিতে চান এটি রিমুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

সফলতা আসবেই জানিয়ে রিমু বললেন, ‘‘আত্মনির্ভরশীল হলে নিজের একটা মনোবল থাকে যা প্রতিটি মানুষের থাকা উচিত। যখন আমি উদ্যোগ গ্রহণ করিনি, তখন নিজের কোন মনোবল ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আমার সে মনোবল আছে। নিজের বিপদে পরিবারের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা এখন আমার আছে। যা সকলের থাকা উচিত।’’

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here